বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে গণপিটুনির ঘটনা ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে। কুমিল্লার মুরাদনগরে মা, ছেলে ও মেয়েকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা, গাজীপুরে যুবক হৃদয়, ঢাকায় আল আমিন, লালমনিরহাটে এক সেলুন কর্মী এবং সিরাজগঞ্জে মানসিক প্রতিবন্ধীসহ গত ছয় দিনে অন্তত ছয়জন এই সহিংসতার শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।
মানবাধিকার সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত দেশে ২৫৩টি গণপিটুনির ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৬৩ জন এবং আহত হয়েছেন আরও ৩১২ জন। এই পরিসংখ্যান শুধু মব সন্ত্রাসের ভয়াবহ চিত্রই নয়, বরং বিচারহীনতার বাস্তব প্রতিচ্ছবিও তুলে ধরে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একাধিকবার কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধীরা রয়ে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অপরদিকে রাজনৈতিক প্রভাব, বিচারহীনতা এবং আইনের শাসনের অভাবকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একজন সদস্য জানান, “এই প্রবণতা ভয়াবহ ও সভ্য সমাজের জন্য হুমকিস্বরূপ। রাষ্ট্রীয় বিচার ব্যবস্থায় আস্থার সংকট থেকেই সাধারণ মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে।”
সরকারি উপদেষ্টারা, মানবাধিকারকর্মী, রাজনৈতিক নেতারা ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একে অপরকে দায়ী করলেও বাস্তবতা হলো, এখনো পর্যন্ত কার্যকর ও দৃশ্যমান কোনো প্রতিকার উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি।
গণপিটুনি এখন আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং তা সমাজে ভয়, নৈরাজ্য ও বিচারবহির্ভূত সংস্কৃতির ছাপ ফেলে চলেছে। বিশ্লেষকদের মতে, দ্রুত বিচার, জনসচেতনতা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই এই সহিংস প্রবণতা রোধ করা সম্ভব।