মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৯:০৭ অপরাহ্ন

স্মৃতিকথা জুলাই-২০২৪

উত্তরা নিউজ প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম: শুক্রবার, ৪ জুলাই, ২০২৫
ফাইল ছবি: উত্তরা নিউজ

স্মৃতিকথা জুলাই-২৪: পর্ব ১

লেখক: তাহেরা আখতার চৌধুরী সোমা

জুন মাসের ৫ তারিখে ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের’ পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় প্রদান করে হাইকোর্ট। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে যে আন্দোলন সংগঠিত হয়, ঘটনার পরম্পরায় তারই ফলাফল জুলাই-আগস্টের শিক্ষার্থী-গণঅভ্যুত্থান। মূলত ৩০ জুন ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত কোটা সংস্কার আন্দোলনটি ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। নিজস্ব ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল এবং শাহবাগ চত্বরে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মাধ্যমে তারা তাদের দাবি জানায় এবং তাদের সেই দাবি মানতে তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকারকে তারা ৩০ জুন পর্যন্ত সময় ধার্য্য করে দেয়। ক্ষমতাসীন সরকার এই আন্দোলনকে তেমন একটা গুরুত্ব দেয় না, বরং শিক্ষার্থীদের দাবির ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শন করে।

শিক্ষার্থীদের ‘কোটা সংস্কার’ বিষয়ক দাবি উপেক্ষিত হবার পরিপ্রেক্ষিতে পহেলা জুলাই তারিখে সারা দেশ ব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা বাতিলের দাবিতে ছাত্রসমাবেশ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। ৪ জুলাইয়ের মধ্যে দাবির বিষয়ে চূড়ান্ত সমাধানের আহ্বান জানিয়ে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে তিন দিনের কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। কর্মসূচি অনুযায়ী ২ জুলাই তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে এক ঘন্টা শাহবাগ অবরোধ করে।তাদের সমর্থনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ২০ মিনিটের জন্য অবরোধ করেন। এই আন্দোলনে ৩ জুলাই তারিখে সম্পৃক্ত হয় আরো কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। ঐদিন ঢাবির শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় দেড় ঘণ্টার মতো অবরোধ করে রাখেন। ময়মনসিংহে রেললাইনে ট্রেন অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক অবরোধ করেন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন।

৪ জুলাই তারিখে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ ‘নট টুডে’ বলে আদেশ দেন এবং পরের সপ্তাহে এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে বলে ওই দিন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে জানানো হয়।এই সিদ্ধান্তে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা এবং ঢাকার শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা। শুরু হয় তুমুল আন্দোলন এবং আন্দোলনকারীরা সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, ছাত্র ধর্মঘট এবং সারা দেশে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধের ডাক দেন। এর নাম দেওয়া হয় ‘বাংলা ব্লকেড’, যার ঘোষণা আসে ৬ জুলাই তারিখে এবং যা স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত হতে থাকে ১৩ জুলাই তারিখ পর্যন্ত, এমনকি সরকারির ছুটির দিনগুলোতেও। এরই মধ্যে ৮ জুলাই সারাদেশের ছাত্রদের নিয়ে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে আন্দোলন পরিচালনার জন্য ৫৭ সদস্যের সমন্বয়ক টিম গঠন করা হয়। ১৪ জুলাই রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়ে আন্দোলনকারীরা সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেয়।

 

(চলবে…………….)

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102