বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫৮ অপরাহ্ন

উত্তরায় ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ, থানায় মামলা

উত্তরা নিউজ প্রতিবেদন
  • আপডেট টাইম: বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই, ২০২৫

রাজধানীর উত্তরার হাই কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আবারো ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। মৃত রোগীর নাম জালাল উদ্দিন সরকার (৫৪)। তিনি কোমড়ের হাড়ের অপারেশন করাতে গত ২৩ জুন হাই কেয়ার জেনারেল হাসপাতালের নিউরো-সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. হোজায়ফা আহমাদের তত্বাবধানে তিনি ভর্তি হন বলে জানা গেছে।

বুধবার (০২ জুলাই) বিকেল আনুমানিক ৫টার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত ঘোষণা করা হলে স্বজনদের দাবি, চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসা মৃত্যু জালাল উদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে।

এ বিষয়ে স্বজনরা জানায়, অপারেশনের পরেও জালাল উদ্দিন সরকার কথাবার্তা বলেছিল। কিন্তু, এক রাত ঘুম না হওয়ায় বিষয়টি কর্তব্যরত চিকিৎসককে জানালে ডাক্তার জালাল উদ্দিনকে ঘুমের ঔষধ পুশ করেন। এরপর থেকে রোগীর জ্ঞান ফেরেনি। তিন-চার দিন পর আজ তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।

সন্ধ্যায় উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের লেকড্রাইভ সড়কে অবস্থিত হাই কেয়ার জেনারেল হাসপাতালের সামনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের কাউন্টারের সামনে অবস্থান নিয়েছে রোগীর আত্মীয়-স্বজনেরা।

এ সময় সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে মৃত জালাল উদ্দিন সরকারের ছেলে সোহাগ সরকার সংবাদকর্মীদের কাঁদতে কাঁদতে জানায়, আমার বাবাকে ১ লক্ষ টাকা চুক্তিতে হাড়ের অপারেশন করানোর জন্য এই হাসপাতালে আনি। আমার বাবা নিজে পায়ে হেটে হাসপাতালে আসছে। অপারেশনের পরও উনি ভাল ছিল। ঘুমের ঔষধ দেয়ার পর আমার বাবার আর জ্ঞান ফেরেনি। এখন উনারা (হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ) বলতেছে আমার বাবা নাকি মারা গেছে। উনারা আমার বাবাকে ভুল চিকিৎসা দিয়ে মেরে ফেলছে, আমি এর সঠিক বিচার চাই।

মৃত রোগীর আপন ভাতিজা রুবেল সরকার সাংবাদিকদের জানান, আমার চাচা গতকালই (মঙ্গলবার) মারা গেছে। বিষয়টা বুঝতে পেরে আমরা ডাক্তারসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডাকি। উনারা বলছে রোগী মারা যায়নি। অথচ, আজকে বিকেলে বলতেছে আমার চাচার কিডনী, লিভার আর ফুসফুস নষ্ট হয়ে নাকি আমার চাচা মারা গেছে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে রুবেল বলেন, এই হাসপাতালে এর আগেও ভুল চিকিৎসা দিয়ে রোগী মেরে ফেলার ঘটনা আছে।

মৃত জালাল উদ্দিনের অপর এক স্বজন জানান, গতকালকেই আমরা ডাক্তারকে বলছি- আপনি ঘুমের ঔষধ দিছেন কিনা? ডাক্তার বলে যে ঘুমের ঔষধ দিছে কিনা এটা ওনার মনে নাই। ভুল চিকিৎসা দিয়ে উনারা আমার চাচাকে মেরে ফেলছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।

ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে হাসপাতাল ম্যানেজার ওমর ফারুকের কক্ষে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। রাত ৯টা ৫৩ মিনিটে নিচতলার রিসিপশনে গিয়ে দেখা যায় চেয়ার টেবিল খালি পড়ে আছে। এ সময় দূরে সরে থাকা হাসপাতালের রিসিপশন বিভাগের এক কর্মকর্তা নিজেকে রাজু নাম পরিচয় দিয়ে জানায়, ম্যানেজার স্যার (ওমর ফারুক) ওপরে আইসিইউতে আছে। পরে লিফটের ৫ তলায় আইসিইউর সামনে গিয়ে ম্যানেজার ওমর ফারুকের খোঁজ জানতে চাইলে দায়িত্বরত নিরাপত্তারক্ষীরাও তার খোঁজ দিতে পারেননি। সর্বশেষ রাত সাড়ে এগারটায় মুঠোফোনে কল দিলে হাসপাতাল ম্যানেজার ওমর ফারুকের মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাত আনুমানিক ১২টায় উত্তরা পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রহিম বলেন, এ ঘটনায় রোগীর স্বজনরা থানায় এসেছেন। আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

উল্লেখ্য, এর আগে গত বছর ২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পিত্তথলির অপারেশন করাতে এসে মারা যান শামিমা আক্তার মুন্নি (৩৮) এক নারী। এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় অভিযোগের তদন্ত এখনো চলমান।

 

#জিটি

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102