বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫, ০৩:৩২ পূর্বাহ্ন

অধিনায়ক হিসেবে ‘ব্যর্থ’ নয়, সফলই ছিলেন শান্ত

স্পোর্টস ডেস্ক
  • আপডেট টাইম: শনিবার, ২৮ জুন, ২০২৫
সংগৃহীত ছবি | উত্তরা নিউজ

বাংলাদেশ ক্রিকেটে অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের যাত্রাটা শেষ হয়ে গেল আজ। শেষটা মোটেও ভালো কিছু হয়নি। শ্রীলঙ্কার কাছে ইনিংস ও ৭৮ রানের হার দিয়ে শেষ হলো বাংলাদেশ অধিনায়ক হিসেবে তার যাত্রাটা। তার আগে যেভাবে তাকে সময়ে অসময়ে ‘সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়ালের’ কেন্দ্রবিন্দু হতে হয়েছে, তাতে মনে হতে পারে, তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ খেলেছে সবচেয়ে বাজে ক্রিকেট, আর শান্ত নিজে ছিলেন সবচেয়ে বাজে ক্রিকেটারটা।

তবে তার পারফর্ম্যান্স, বাংলাদেশের পারফর্ম্যান্স কিন্তু মোটেও তা বলছে না। পরিসংখ্যানে চোখ বোলালে মেলে প্রশ্নের জবাবটা। সেখানে দেখা যায়, অধিনায়ক হিসেবে ব্যর্থ তো নয়ই, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সবচেয়ে সফল ছিলেন শান্তই।

অধিনায়ক হিসেবে তার যাত্রার শুরুটা হয়েছিল ২০২৩ সালের অক্টোবরে, বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। কথায় আছে মর্নিং শোজ দ্য ডে। সে ম্যাচে ৭৬ রানের ইনিংস খেলে শান্ত ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি অধিনায়ক হিসেবে কেমন খেলবেন।

Najmul Hossain Shanto, leading Bangladesh for the first time in any format, flips the coin, Bangladesh vs New Zealand, 3rd ODI, Dhaka, September 26, 2023
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে অধিনায়কত্বে অভিষেক হয় শান্তর/ফাইল ছবি

 

অধিনায়ক হিসেবে ব্যক্তিগত পারফর্ম্যান্স অবশ্য বেশ ছিল শান্তর। অন্তত টেস্ট আর ওয়ানডেতে তো বটেই। টেস্টে তার ক্যারিয়ার গড় যেখানে ৩২, সেখানে অধিনায়ক হিসেবে তার গড়টা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬-এ। পুরো ক্যারিয়ারে ৭ সেঞ্চুরি আর ৫ ফিফটি করেছেন তিনি। তার ৩টি সেঞ্চুরি আর ২টি অর্ধশতক এসেছে অধিনায়ক হওয়ার পর।

ওয়ানডেতে অধিনায়ক হিসেবে তার পারফর্ম্যান্স আরও ভালো। ক্যারিয়ার গড় প্রায় দেড় গুণ বেড়ে গিয়েছিল অধিনায়ক হিসেবে। তার গড় ৩৪, তবে অধিনায়ক হিসেবে তা ৫১। ক্যারিয়ার সেরা অপরাজিত ১২২ রানের ইনিংসটা অধিনায়ক থাকাকালেই এসেছে তার ব্যাটে। সঙ্গে তার স্ট্রাইক রেটেও উন্নতি হয়েছে এই সময়।

টি-টোয়েন্টিতে অবশ্য অধিনায়ক হওয়ার পর ভালো পারফর্ম করতে পারেননি তিনি। ক্যারিয়ার গড় আর স্ট্রাইক রেট দুটোই কমেছে এই সময়।

তবে অধিনায়ক হিসেবে শুধু নিজের পারফর্ম্যান্সের দিকে তাকালেই হয় না। দলের পারফর্ম্যান্স কেমন, সেটাও নজরে রাখতে হয়। তার অধীনে বাংলাদেশ পাস মার্ক পেয়ে উতরে যাচ্ছিল সেখানেও।

অন্তত দশ ম্যাচ অধিনায়কত্ব করেছেন, এমন অধিনায়কদের মধ্যে শান্তর অধীনেই টেস্টে সবচেয়ে ভালো খেলেছে বাংলাদেশ। তার অধীনে খেলা ১৪ টেস্টের ৪টিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। মোট ম্যাচের ২৮.৫৭ শতাংশ ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে, জয়-পরাজয়ের অনুপাত ০.৪৪।

অধিনায়ক হিসেবে টি-টোয়েন্টি বাদে বাকি দুই ফরম্যাটে নিয়মিত হেসেছে শান্তর ব্যাট, নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। বিষয়টার মাহাত্ম্য বেড়ে যায় যখন আপনি হিসেবে আনবেন শান্তর তুমুল ‘অজনপ্রিয়’ ভাবমূর্তিটাকে। পান থেকে চুন খসলেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মুণ্ডুপাত হবে, সে বিষয়টা মাথায় রেখেই পারফর্ম করাটা মোটেও সহজ কিছু নয়। তবে শান্ত সে কঠিন কাজটাই করে গেছেন নিয়মিত। প্রায় প্রতি ম্যাচে পারফর্ম করে গেছেন দারুণভাবে।

 

 

শান্ত বাদে আর কারো অধীনে এমন ভালো পারফর্ম্যান্স আর কখনো করেনি দল। জয় পরাজয়ের অনুপাতে তার কাছাকাছি আছেন মুশফিক, তার অধীনে বাংলাদেশের অনুপাত ছিল ০.৩৮। আর শতকরা ম্যাচ জেতার হারে শান্তর পরে আছেন সাকিব আল হাসান। তার অধীনে বাংলাদেশ ২১.০৬ শতাংশ ম্যাচে জিতেছে।

Najmul Hossain Shanto with Bangladesh's well-earned trophy, Pakistan vs Bangladesh, 2nd Test, Rawalpindi, 5th day, September 3, 2024
পাকিস্তানের মাটি থেকে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় নিয়ে ফেরাটা তো দেশের টেস্ট ইতিহাসেরই সেরা অর্জন/ফাইল ছবি

শান্তর অধীনে বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে নিজ দেশে। পাকিস্তানের মাটি থেকে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় নিয়ে ফেরাটা তো দেশের টেস্ট ইতিহাসেরই সেরা অর্জন।

এবার আসুন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। এখানে তার ব্যাট খুব একটা না হাসলেও দল হেসেছে ভালোভাবেই। ২৪ ম্যাচের ১০টিতে জিতেছে। জয়ের বিপরীতে পরাজয়ের অনুপাত ০.৭৬, শতকরা ম্যাচ জেতার হার ৪১.৬৬। আর কোনো অধিনায়কের অধীনে বাংলাদেশের এত সফল সময় কাটেনি। তার কাছাকাছি আছেন সাকিব, তার অধীনে বাংলাদেশ ৪১.০২ শতাংশ ম্যাচে জিতেছিল, হারের বিপরীতে জয়ের অনুপাতটা ছিল ০.৬৯।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তার অধীনেই এক আসরে সবচেয়ে বেশি ৩ ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশ। আরেকটু এদিক ওদিক হলে তো সেমিফাইনালই খেলে ফেলতে পারত, যা হলে প্রথমবারের মতো কোনো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে দেখা যেত বাংলাদেশকে।

Najmul Hossain Shanto was leading from the front in the field, Afghanistan vs Bangladesh, Super Eight, Group 1, Men's T20 World Cup 2024, Kingstown, June 24, 2024

শুধু ওয়ানডেতেই তার অধীনে ভালো করেনি দল। ১৩ ম্যাচের ৪টিতে জিতেছে মোটে। শতকরা ম্যাচ জয়ের হারের দিক থেকে সেরা পাঁচেও নেই শান্ত। আফগানিস্তানের কাছে সিরিজ হারের যন্ত্রণা আছে এই সময়ে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও কোনো জয় তুলে নিতে পারেনি বাংলাদেশ। এই সময়ে অবশ্য শান্ত নিজে পারফর্ম করেছেন বেশ।

অধিনায়ক হিসেবে শান্ত টেস্ট আর টি-টোয়েন্টিতে সফল ছিলেন। ওয়ানডেতে তার অধীনে খেলেছেই অনেক কম ম্যাচ, সে কারণে সে ফরম্যাটে মোটাদাগে ‘ব্যর্থ’ হলেও ঠিক ব্যর্থ বলা চলে না তাকে।

মাঠের বাইরেও অধিনায়ক হিসেবে অনেক কাজ থাকে। শান্ত সেখানেও বেশ ভালোই করছিলেন। ড্রেসিংরুমে নতুন একটা সংস্কৃতি টেনে আনছিলেন, যেখানে অন্তত খেলোয়াড়রা সুযোগ পাওয়ার আশ্বাস পাচ্ছিলেন; তার সুফলটা সাদমান ইসলামের পুনরুত্থান, জাকের আলী অনিক, রিশাদ হোসেনদের তারকা হয়ে ওঠা দেখলেই বুঝা যায়।

আরও একটা বিষয়, অধিনায়ক হিসেবে টি-টোয়েন্টি বাদে বাকি দুই ফরম্যাটে নিয়মিত হেসেছে শান্তর ব্যাট, নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। বিষয়টার মাহাত্ম্য বেড়ে যায় যখন আপনি হিসেবে আনবেন শান্তর তুমুল ‘অজনপ্রিয়’ ভাবমূর্তিটাকে।

পান থেকে চুন খসলেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মুণ্ডুপাত হবে, সে বিষয়টা মাথায় রেখেই পারফর্ম করাটা মোটেও সহজ কিছু নয়। তবে শান্ত সে কঠিন কাজটাই করে গেছেন নিয়মিত। প্রায় প্রতি ম্যাচে পারফর্ম করে গেছেন দারুণভাবে। অধিনায়কত্বের শেষে তাই সার্বিকভাবে আর যাই হোক ‘ব্যর্থ’ বলা যাবে না শান্তকে, রাখতে হবে ‘সফল’দের কাতারেই।

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102