হজ কবুল হলো কি না তা বোঝার জন্য নানা নিদর্শন আছে। কিছু নিদর্শন নিচে উল্লেখ করা হলো—হজ কবুল হওয়ার অন্যতম বড় আলামত হলো, জীবনের মোড় ঘুরে যাওয়া; ঈমান ও আমলে দৃঢ়তা সৃষ্টি হওয়া। পার্থিবতা ও দুনিয়াসংলগ্ন বিষয়-আশয়ের প্রতি অনীহা ও পরকালের প্রতি প্রবল আগ্রহ-লোভ সৃষ্টি হওয়া। হজ-পূর্ব জীবনে যেসব পাপ ও অন্যায়ের সংলগ্নতায় জীবন যাপন করতে অভ্যস্ত ছিল সেগুলো থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হয়ে জীবন যাপন করতে শুরু করা।হজ কবুল হওয়ার আরেকটি আলামত হলো, আমল কবুল না হওয়ার ভয় করা। সাহাবায়ে কিরাম (রা.) আমল কবুল হওয়া-না হওয়ার ব্যাপারে খুবই শঙ্কিত থাকতেন। তাঁদের প্রসঙ্গেই পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘আর যারা যা দান করে, যা তাদের দেওয়া হয়েছে তা থেকে ভীত, কম্পিত হৃদয়ে—এই বোধে যে তারা তাদের পালনকর্তার কাছে ফিরে যাবে।’(সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৬০)সব পাপাচার থেকে বিরত থাকা হজ কবুল হওয়ার আরেকটি আলামত।কবুল হজের মাধ্যমে হজ পালনকারী নিষ্পাপ হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ইসলাম, হিজরত ও হজ মুমিনের বিগত দিনের সব গুনাহ ধসিয়ে দেয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৯২)সুতরাং গুনাহ থেকে মুক্ত হওয়ার পর সে তাতে ফিরে যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বিদায় হজের ভাষণে বলেছিলেন, ‘শিগগিরই তোমরা তোমাদের প্রভুর সঙ্গে মিলিত হবে।অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তোমাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। অতএব, সাবধান! তোমরা আজকের দিনের পর যেন পুনরায় পথভ্রষ্ট হয়ো না।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৪০৬)ইবাদত করার তাওফিক লাভ করা হজ কবুল হওয়ার অন্যতম আলামত। আল্লাহর আনুগত্য তথা ইবাদত অধিক হারে করতে পারার তাওফিক লাভ করা হজ কবুলের অন্যতম নিদর্শন। যেমন—হাসান বসরি (রহ.) বলেন, আমলের প্রতিদান হলো, সেই আমলের পরে আরেকটি ভালো আমল করতে পারা।আর পাপের পরিণাম হলো, সেই পাপের পরে আরেকটি পাপ করে ফেলা। কারণ আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে কবুল করে নেন, তখন তাকে তাঁর আনুগত্য করার তাওফিক দেন এবং তাকে পাপ থেকে দূরে রাখেন।(ইবনুল কাইয়িম, মিফতাহু দারিস সাআদাহ : ১/২৯৯)হজ একটি গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল। এই আমলের পর অন্য ভালো কাজ বেশি বেশি করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা জেনে রাখ যে পার্থিব জীবন খেল-তামাশা, সাজসজ্জা, পারস্পরিক অহমিকা, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ছাড়া কিছু নয়। যার উপমা বৃষ্টির মতো। যার উৎপাদন কৃষককে চমত্কৃত করে। অতঃপর তা শুকিয়ে যায়। যাকে তুমি হলুদ দেখতে পাও। অতঃপর তা খড়কুটায় পরিণত হয়। আর পরকালে আছে (কাফিরদের জন্য) কঠিন শাস্তি এবং (মুমিনদের জন্য) আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। বস্তুত পার্থিব জীবন ধোঁকার উপকরণ ছাড়া কিছু নয়।’ (সুরা : হাদিস, আয়াত : ২০)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘এরাই দ্রুত কল্যাণ কাজে ধাবিত হয় এবং তারা তাঁর প্রতি অগ্রগামী হয়।’
(সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৬১)
অতএব, নেকি অর্জনে তৎপর হওয়া হজ কবুল হওয়ার অন্যতম আলামত।