‘মানবিক করিডরের’ সিদ্ধান্তে বেড়েছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, নতুন সংকটের শঙ্কা
অনলাইন ডেক্স রির্পোট
-
আপডেট টাইম:
বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫
-
৩
বার পঠিত
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রাখাইন (আরাকান) সীমান্তে ‘মানবিক করিডর’ নিয়ে আলোচনার পর থেকে আচমকাই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গার স্রোত। অভিযোগ উঠেছে, আরাকান আর্মির নির্যাতনের শিকার হয়ে এপাড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছেন রোহিঙ্গারা। স্থানীয়দের শঙ্কা, বাংলাদেশ সীমান্তে মানবিকতার নামে করিডর দেওয়া হলে চলমান রোহিঙ্গা সমস্যার মতো আরো একটি সংকট সৃষ্টি হতে পারে।এদিকে করিডর নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা ‘মানবিকতার’ ধুয়া তুলে করিডর দেওয়ার তীব্র বিরোধিতা করছেন। একসঙ্গে করিডরের আলোচনার মধ্যে ‘স্টারলিংক’ বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে চলে আসার বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত জেলা কক্সবাজারের লোকজন বলছেন, ২০১৭ সালে মানবিকতার ধুয়া তুলে গদিচ্যুত সরকার প্রধান শেখ হাসিনা এদেশে এগারো লক্ষাধিক রোহিঙ্গা এনে বাহবা কুড়িয়েছিলেন।এমনকি মানবতার কথা বলে সীমান্ত খুলে দিয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা এনে শেখ হাসিনা ‘মানবতার মা’ সেজেছিলেন। অথচ শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও তাদের দেশে ফেরাতে পারেননি। সীমান্তের আলোচিত মানবিক করিডর প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর গতকাল বিকালে , এরকম মানবতার ধুয়া তুলে শেখ হাসিনাকে দিয়ে বিশ্ব মোড়লরা বাংলাদেশের কাঁধে তুলে দিয়েছে ১১ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা। সেই সমস্যা জিইয়ে রেখেই এখন আরেকবার ‘মানবতার করিডর’ নামে আরেকটি আন্তর্জাতিক ফাঁদে পা দিচ্ছি কিনা আমাদের গভীরভাবে ভাবতে হবে।তিনি বলেন, এমন সময়ে রাখাইনকে মানবিক করিডর দেওয়ার বিষয়টি দেশের একজন সিনিয়র নাগরিক এবং কক্সবাজারের অধিবাসী হিসেবে আশংকাজনক, ভীতিকর। প্রবীণ আইনজীবী আরো বলেন, ‘কথায় আছে যার বাবাকে কুমিরে খেয়েছে সে ঢেঁকি দেখলেও ভয় পায়।’ তাই রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে সাময়িক আশ্রয় দিয়ে যেখানে এখন সমস্যাটি ‘গলার কাঁটা’ হিসাবে দেখা দিয়েছে, সেখানে নতুন করে করিডর দেওয়া হলে তা আরো দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার সৃষ্টি হবে। কক্সবাজার জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ-উখিয়া সংসদীয় আসনের সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী ,সীমান্তে যদি মানবিক করিডর বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে এককথায় তা হবে বাংলাদেশের জন্য মড়ার উপর খাড়ার ঘা। দেশত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবতায় আমরা ১১ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে বড্ড সমস্যায় রয়েছি, সেখানে নতুন করে মানবতার করিডর আমাদের দরকার নেই।তিনি বলেন, মানবিক করিডরের আওয়াজ শোনার পর থেকেই সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধের জন্য তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান।কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার এ বিষয়ে এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘মানবিক কারণে করিডর দিলে, অমানবিক মানুষের আগমন ঘটতে পারে। তখন কি হবে?’ মোহাম্মদ ফয়সাল নামের একজন আইনজীবী লিখেছেন, ‘রোহিঙ্গাকে করিডর দেওয়া মানে দেশটি অরক্ষিত করে দেওয়া।’ উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফ্রু উদ্দিন চৌদুরী বলেন, শর্ত সাপেক্ষে করিডর সাময়িক সময়ের জন্য দেওয়া যেতে পারে। সেই শর্তটি হচ্ছে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের আরাকান রাজ্যে তাদের ঘরবাড়িতে ফিরিয়ে নিতে হবে।’এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে আরাকান থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। ইতিমধ্যে এক লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশের কথার জানিয়েছে জাতিসংঘ। বিশেষ করে করিডরের বিষয়টি আলাপ আলোচনায় আসার পর থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের গতিও বেড়েছে। রাখাইন থেকে আসা রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, সেখানে আরাকান আর্মির সদস্যরা (রোহিঙ্গাদের ভাষায় মগবাগি) এখন নীরবে রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে ভিটাচ্যুত করছে। আগে মায়ানমারের সেনাদের অত্যাচার-নির্যাতনের বিষয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হতো। কিন্তু এখন আরাকান আর্মির নির্যাতনের তথ্য গণমাধ্যমে প্রচার হচ্ছে না।গত রবিবার (২৭ এপ্রিল) রাখাইনের ভুচিদং বউবলি গ্রাম থেকে কুতুপালং ক্যাম্পে আসা রোহিঙ্গা নারী নূরনাহার বেগম (৪০) জানান, আরাকান আর্মির সদস্যরা কেবল তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে তাদের নিঃস্ব করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না; সেই সঙ্গে টাকা পয়সা নিয়ে সীমান্ত পার করিয়ে দিচ্ছে। নূরনাহার তার দুই শিশু সন্তানকে বাংলাদেশের সীমান্ত পার করিয়ে দিতে আরাকান আর্মির সদস্যরা আদায় করে নিয়েছেন ৪৫ লাখ মায়ানমারের কিয়েত (মুদ্রা), অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রায় এক লাখ ষাট হাজার টাকা। নূরনাহারের স্বামী আবদুল খালেকসহ পরিবারের আরো ৫ সদস্য এখনো সেখানে আটকা রয়েছেন। তারা টাকার অভাবে আসতে পারছে না। আরাকান আর্মির সদস্যরা যে কোনোভাবে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে জানান নূরনাহার বেগম।আবার এপাড়ে এসেও দালাল চক্রের কবলে পড়ে রোহিঙ্গাদের সর্বস্বান্ত হতে হচ্ছে। বাংলাদেশের নাইক্ষ্যংছড়ির পাহাড়ি সীমান্ত দিয়েই এখন সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটছে। নূরনাহার গর্জনিয়া ইউনিয়নের পাহাড়ি পথে আসার সময় স্থানীয় বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা দালাল চক্র জনপ্রতি ৪ হাজার টাকা করে ১২ হাজার টাকা আদায় করেছে বলেও জানান তিনি। তিনি এখন কুতুপালং ক্যাম্প ওয়ানের ডি ব্লকে তার আত্মীয়ের কাছে রয়েছেন।
নিউজটি শেয়ার করুন..
-
-
-
- Print
- উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..