বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতের মরদেহ পুঁজি করে চাদাঁবাজির অভিযোগ
অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট
-
আপডেট টাইম:
বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নিহত রিপন মিয়ার মরদেহ উত্তোলনে বাধা প্রদানের অভিযোগ পাওয়া গেছে মামলার বাদী আকতার হোসেনের বিরুদ্ধে।তদন্তের স্বার্থে আদালতের নির্দেশে গতকাল মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) মরদেহ উত্তোলন করতে গেলে বাধা প্রদান করেন বাদী ও তার লোকজন। তাদের বাধার মুখে কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন না করেই ফিরে যান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসমা উল হুসনা ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম।জানা যায়, গত ৫ আগস্ট রাজধানী ঢাকার উত্তরায় নিহত হন রিপন।গত ২৬ আগস্ট উত্তরা পূর্ব থানায় এ বিষয়ে মামলা হয়। তবে রিপনের মরদেহ পুঁজি করে লাখ লাখ টাকা চাদাঁবাজির অভিযোগ উঠেছে মামলার বাদী আকতার হোসেনের বিরুদ্ধে।মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিহত রিপনের মরদেহ দাফন করা হয়েছে। তাই মামলাটি অধিক তদন্তের স্বার্থে মরদেহ উত্তোলনের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়।আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৯ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর বিজ্ঞ আদালত রিপনের মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে মরদেহ উত্তোলন করতে এসে তার পরিবারের বাধার মুখে পড়ি। ফলে মরদেহ উত্তোলন করা সম্ভব হয়নি।’নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসমা উল হুসনা বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে মরদেহ উত্তোলনের জন্য গেলে নিহত রিপনের পরিবারের লোকজন বাধা প্রদান করেন।তাই মরদেহ উত্তোলন না করেই ফেরত আসি। এ বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতের সিদ্ধান্তে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।’মামলার বাদী আকতার হোসেন জানান, তার ভাই রিপন পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন, এমন সব প্রমাণাদি তার কাছে রয়েছে। তাছাড়া মরদেহ উত্তোলনের বিষয়ে আগে থেকেই আমাকে অবহিত করা হয়নি, তাই বাধা দেওয়া হয়েছে। আইনগতভাবেই সবকিছু মোকাবিলা করা হবে।জানা যায়, বকশীগঞ্জ পৌর শহরের চর কাউরিয়া সীমার পাড় এলাকার বাসিন্দা মৃত রেজাউল করিমের ছেলে রিপন মিয়া ঢাকায় একটি বেসরকারি কম্পানিতে কাজ করতেন। প্রথম স্ত্রীকে বাড়িতে রেখে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন তিনি। আন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট বিকালে ঢাকার উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরে গুরুতর আহতবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে চীন-মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।মারা যাওয়ার পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই ৬ আগস্ট বকশীগঞ্জ উপজেলার পানাতিয়া পাড়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়। এ ঘটনার প্রায় ২০ দিন পর রিপন মিয়া পুলিশের গুলিতে মারা গেছে দাবি করে ২৬ আগস্ট উত্তরা পূর্ব থানায় একটি মামলা করেন নিহত রিপনের বড় ভাই আকতার হোসেন। মামলায় ক্ষমতাচুত্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ নামীয় ১৮ জন ও অজ্ঞাতনামা ২০০ জনকে আসামি করা হয়।নামীয় ১৮ জনের মধ্যে বকশীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম সওদাগর, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম তালুকদার জুমান ও সমাজসেবক হাজী আমানুল্লাহসহ বকশীগঞ্জের ১৩ জনকে মামলায় আসামি করা হয়। মামলা দায়েরের পর আকতার হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যাপক চাদাঁবাজির অভিযোগ ওঠে। বিভিন্ন জনকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, মামলায় আসামির নাম অর্ন্তভুক্ত করণ এবং মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। গত ১৮ জানুয়ারি নিহত রিপনের স্ত্রী খাদিজা বেগম সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেন।খাদিজা বেগম জানান, তিনি মামলা করতে চাইলে আকতার তাকে বাধা দেন। পরবর্তীতে তাকে কিছু না জানিয়ে চাঁদাবাজি করার জন্যই মামলার বাদী হন আকতার হোসেন। অন্যায়ভাবে একটি পক্ষের কাছে সুবিধা নিয়ে বকশীগঞ্জে ১৩ জন নিরীহ মানুষকে মামলায় আসামি করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তাছাড়া নিহতের মরদেহকে পুঁজি করে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য ও চাদাঁবাজি করেছেন তিনি।তিনি আরো জানান, গত ৫ আগস্টের আগে আকতার পরিবার পরিজন নিয়ে থাকত একটি কুঁড়েঘরে। মানুষের কাছে হাত পেতে চলত তার সংসার। কয়েক মাসের ব্যবধানে আকতার হোসেন লাখপতি বনে গেছেন। পাকা বিল্ডিং করেছেন। দামি দামি আসবাবপত্র ও নতুন মোটরসাইকেল কিনেছেন তিনি। নিরপরাধ কেউ যাতে হয়রানি না হয় সেজন্য আইন উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আকতার হোসেন।নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, গুলিতে নয়, রিপন মারা গেছেন ট্রাকচাপায়। প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে একটি মহলের ইন্ধনে মামলাটি করা হয়েছে। মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করলেই প্রকৃত সত্য বেড়িয়ে আসবে। মরদেহ উত্তোলনে বাধা দেওয়ার বিষয়টি আরো সন্দেহের সৃষ্টি করেছে বলে দাবি তাদের। তাই দ্রুত মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করে প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবি করেছেন তারা।
নিউজটি শেয়ার করুন..
-
-
-
- Print
- উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..