ভারত ও পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্কে পরিবর্তন আনছে, যেখানে নয়াদিল্লি আফগানিস্তানের তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে, আর ইসলামাবাদ বিপ্লব-পরবর্তী বাংলাদেশের নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে।
দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক অবস্থান মূলত এ অঞ্চলের দুটি বৃহত্তম দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের অবিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। পারমাণবিক শক্তিধর ভারত ও পাকিস্তান—যারা ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশের অবসানের সময় উপমহাদেশ থেকে পৃথক হয়েছিল—এ পর্যন্ত একাধিক যুদ্ধ করেছে এবং এখনো তারা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী।এ প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনো অবসান হচ্ছে না, বরং তা আরো গভীর হচ্ছে।
ভারত দীর্ঘদিন ধরে চীনের আঞ্চলিক প্রভাব বাড়ানো নিয়ে সতর্ক। পাশাপাশি বিশ্বে জনসংখ্যায় শীর্ষস্থানে থাকা এ দুটি দেশ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারে প্রতিযোগিতা করছে, যদিও সম্প্রতি তাদের মধ্যে কূটনৈতিক উষ্ণতা দেখা যাচ্ছে।দুবাই বৈঠকের পর দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া এক সম্পাদকীয়তে লিখেছে, তালেবানের সঙ্গে নয়াদিল্লির ‘নীরব কিন্তু সচেতন সংযোগ’ আঞ্চলিক কৌশলগত সম্পর্ক পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।পত্রিকাটি আরো লিখেছে, ‘তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দিলেও ভারত আফগানিস্তানে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করার গুরুত্ব বুঝতে পারে।’এই উদ্যোগ ভারতের বৃহত্তর আঞ্চলিক কৌশলের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ, যার লক্ষ্য পাকিস্তানে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ও এর প্রভাব মোকাবেলা করা।’একই সময়ে দীর্ঘদিনের শত্রু পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এখন ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ সম্পর্কের কথা বলছে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ একসময় একই রাষ্ট্র ছিল, কিন্তু ১৯৭১ সালের ভয়াবহ যুদ্ধে তারা বিভক্ত হয়। এরপর বাংলাদেশ ভারতের আরো কাছাকাছি চলে আসে।তবে দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের আগস্টে এক বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন এবং হেলিকপ্টারে করে তার পুরনো মিত্র ভারতে আশ্রয় নেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের প্রত্যর্পণ অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে অবস্থান করছেন, যদিও তার বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর পর থেকে বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়েছে, যা ইসলামাবাদ ও ঢাকার জন্য সম্পর্ক পুনর্গঠনের সুযোগ করে দিয়েছে। পাকিস্তানের একটি কার্গো জাহাজ কয়েক দশক পর সরাসরি বাংলাদেশে পণ্য পরিবহন করে এবং গত নভেম্বরে চট্টগ্রাম বন্দরে মালামাল খালাস করে।
ডিসেম্বরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তারা ‘সম্পর্ক দৃঢ় করতে সম্মত হন’ বলে জানান। পরে শীর্ষস্থানীয় বাংলাদেশি সামরিক কমান্ডাররা পাকিস্তান সফর করেন এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় তারা দুই দেশের মধ্যে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের’ প্রশংসা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমেনা মহসিন এএফপিকে বলেন, এই আকস্মিক ঘনিষ্ঠতা আন্তর্জাতিক কূটনীতির অন্যতম পুরনো নীতিকে প্রতিফলিত করে। তিনি বলেন, ‘আমার শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু।’