বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন

আবার জাপায় ভাঙন: প্রকাশ্যে রওশনের পক্ষে ফিরোজ রশীদ ও বাবলা

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট টাইম: সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
আবারও ভাঙনের মুখে জাতীয় পার্টি (জাপা)। গতকাল রবিবার রওশন এরশাদের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন দলটির দুই প্রভাবশালী নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। তাঁদের পাশে নিয়ে রওশন জানিয়েছেন, ৯ মার্চ দলের সম্মেলন হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সম্মেলনের মাধ্যমে রওশনের নেতৃত্বে নতুন কমিটি হলে জাপা আবারও ভাঙবে।

৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভরাডুবির পর চলমান অস্থিরতার মধ্যে রওশন এরশাদের পক্ষে কাজী ফিরোজ রশীদ ও আবু হোসেন বাবলার প্রকাশ্য অবস্থান নেওয়ার ঘটনাটি জাপায় বেশ নাড়া দিয়েছে। এত দিন কৌশলী অবস্থান নিলেও গতকাল এ দুই নেতা অবস্থান স্পষ্ট করলেন। রওশনের পক্ষে প্রকাশ্যে আসায় আবু হোসেন বাবলাকে কো-চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের। এর আগে জি এম কাদেরের বিরোধিতা করায় সম্প্রতি কাজী ফিরোজ রশীদও কো-চেয়ারম্যান পদ হারান।

গত এক মাসে আরো বেশ কয়েকজন নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর কয়েক শ নেতা পদত্যাগও করেছেন। রওশনের সংবাদ সম্মেলনের পর গতকাল বনানী কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘কেউ যদি জাতীয় পার্টি নামে আরেকটি দল করতে চান, করতেই পারেন। বাধা দিতে পারি না।

দলের বাইরে কেউ ১০টি কমিটি ঘোষণা করলেও তাতে কিছু যায়-আসে না।’

১৯৮৬ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠার পর অন্তত ছয়বার ভেঙেছে জাতীয় পার্টি। মূল দল থেকে বর্তমানে জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন অংশ ছাড়াও জেপি (মঞ্জু), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (মতিন) নামে আরো তিনটি নিবন্ধিত দল রয়েছে। জাপা (জাফর) নামে আরেকটি অনিবন্ধিত দল সক্রিয়। এ অবস্থায় ৯ মার্চের সম্মেলনের মাধ্যমে রওশনের নেতৃত্বে আরেকটি জাতীয় পার্টির জন্ম হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গতকাল গুলশানের বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে রওশন বলেন, জাতীয় পার্টি চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। দলকে ফের সুসংগঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে আগামী ৯ মার্চ জাতীয় সম্মেলন ডাকা হয়েছে। গত ২৮ জানুয়ারি নিজেকে জাপার চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছিলেন দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ। তখন চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলেন তিনি। এরপর নিজ অনুসারীদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করেন।

সংবাদ সম্মেলনে রওশন আরো বলেন, ‘নেতাকর্মীদের দাবিতে দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। কাজী ফিরোজ রশীদ ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ দলের প্রতিষ্ঠাকালীন নেতারা এবং এরশাদভক্ত সর্বস্তরের অগণিত নেতাকর্মী পাশে দাঁড়িয়েছেন। সবাই মিলে সুন্দর একটি সম্মেলন উপহার দিয়ে জাতীয় পার্টিতে আবার প্রাণশক্তি ফেরাতে চাই।’

এ সময় পাশে বসা কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘শুনেছি ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। আর এবার নির্বাচনে কী দেখলাম? দেশের চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে নিজে বড়, আর নিজের চাইতে স্ত্রী বড়। এভাবে কোনো দল চলতে পারে না।’

আবু হোসেন বাবলা বলেন, ‘রওশন এরশাদের নেতৃত্বে পচা মাংস ফেলে দিয়ে নতুন জাতীয় পার্টি তৈরি করা হবে।’

এরশাদের জীবদ্দশা থেকেই দ্বন্দ্ব চলছে রওশন এরশাদ ও তাঁর দেবর জি এম কাদেরের। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে তা চরমে পৌঁছে। নেতৃত্বের লড়াইয়ে টিকতে না পেরে নির্বাচনে অংশই নেননি গত দুই সংসদের বিরোধী দলের নেতা রওশন। তাঁর অনুসারীদের কাউকেই এবার মনোনয়ন দেয়নি জাপা। জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপা মাত্র ১১টি আসন পাওয়ায় দলের মধ্যে ব্যাপক হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের পর ভোটে যাওয়া এবং প্রার্থীদের খোঁজখবর না নেওয়ার বিষয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন নেতাকর্মীরা।

সংবাদ সম্মেলনে রওশান ‘সম্মেলন বাস্তবায়ন’ কমিটির আহ্বায়ক করেন কাজী ফিরোজকে। আবু হোসেন বাবলাকে কো-আহ্বায়ক, গোলাম সরোয়ার মিলনকে যুগ্ম আহ্বায়ক, শফিকুল ইসলামকে সদস্যসচিব এবং জিয়াউল হক মৃধাকে কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এদিকে জাপায় বলাবলি হচ্ছে, স্ত্রী সালমা হোসেনকে সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন না দেওয়ায়ই রাতারাতি পক্ষ বদল করেছেন আবু হোসেন বাবলা। তবে নিজ আসনে সমঝোতা না হওয়ায় তিনি আগে থেকেই জি এম কাদেরের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। ঢাকা-৪ আসনের দুইবারের সংসদ সদস্য বাবলা এবার ভোটে হয়েছেন তৃতীয়।

বাবলার পক্ষবদলকে অবশ্য আমলে নিতে চাচ্ছেন না মুজিবুল হক চুন্নু। রওশনের সংবাদ সম্মেলনের পর গতকাল দুপুরে বনানী কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘উনি যেহেতু মূল দলের সঙ্গে থাকতে চান না, অন্য দলের সঙ্গে যেতে চান, তাই পদত্যাগ করলেই ভালো করতেন। যেহেতু অন্য আরেকটি দলে যাওয়ার চেষ্টা করা দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ, তাই তাঁকে অব্যাহতি দিয়েছেন চেয়ারম্যান।’

২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাপার বর্তমান কমিটির মেয়াদ ফুরিয়েছে। কবে সম্মেলন হবে—এ প্রশ্নে চুন্নু বলেন, ‘সম্মেলন নিয়ে সাংবাদিকরা এত উতলা কেন? বলেছি তো, সময় হলেই সম্মেলন করব। এই বছরের মধ্যেই করব।’

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102