সরকারের দুই সংস্থার হিসাবে দেশের প্রতিবন্ধীর সংখ্যায় বিস্তর তফাত দেখা গেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ২৩ লাখ ৬১ হাজার ৬০৪। আর সমাজসেবা অধিদপ্তরের ওয়েব সাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ২৯ লাখ ৪৩ হাজার ৫৩০। দুই সংস্থার হিসাবে ফারাক পাঁচ লাখ ৮১ হাজার ৯২৬ জন।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক হিসাব থাকা জরুরি। তা না হলে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ঘাটতি থাকবে। আর এই ঘাটতির কারণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। একই সঙ্গে দক্ষ মানবসম্পদ না হয়ে বোঝায় পরিণত হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে প্রতিবন্ধীদের প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি। সমাজ ও রাষ্ট্রের পাশাপাশি পরিবার থেকেও বঞ্চনার শিকার হন প্রতিবন্ধীরা। শারীরিক যৌন নির্যাতনের শিকারও হচ্ছে এসব মানুষ।
বিবিএসের হিসাবে সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধী ঢাকা বিভাগে—চার লাখ ৭৪ হাজার ৯৮৮ জন। সবচেয়ে কম সিলেটে—এক লাখ ৬২ হাজার ৬৮ জন। সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২৩ লাখ ৬৫ হাজার প্রতিবন্ধী মাসিক ভাতা পায় ৮৫০ টাকা।
সড়ক দুর্ঘটনাসহ অন্যান্য দুর্ঘটনার শিকার হয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধিতার শিকার হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক অসুস্থতায় এক লাখের বেশি। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী চার লাখের বেশি। বাকপ্রতিবন্ধী এক লাখ ৮১ হাজার ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী দুই লাখের বেশি। শ্রবণপ্রতিবন্ধী এক লাখ ১১ হাজার। শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ১২ হাজার ৬৮৪ জন। বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী দুই লাখ ৩১ হাজারের বেশি। অটিজম ৭৬ হাজার ৩২৬ জন।
বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাসের (বি-স্ক্যান) সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব কালের কণ্ঠকে বলেন, নারী মন্ত্রণালয়ে নারী প্রতিবন্ধীদের কাজ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তারা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সেখানেও আবার প্রতিবন্ধী নারীদের নিয়ে আলাদা কোনো প্রকল্প বা কর্মসূচি নেই।
চাকরিপ্রত্যাশী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট পরিষদের আহ্বায়ক মো. আলী হোসেন বলেন, ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতিবন্ধীদের জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগদানের বিশেষ নিয়োগব্যবস্থা চালু করার কথা থাকলেও, আজ পর্যন্ত তা হয়নি।
প্রতিবন্ধী নারীদের জাতীয় পরিষদের এক বেসলাইন জরিপে দেখা গেছে, প্রতিবন্ধী নারীদের ১৮.২ শতাংশ যৌন হয়রানির শিকার হয়। পাশাপাশি ২২.১ শতাংশ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ৫.২ শতাংশ স্বামীর কাছ থেকে ভরণ-পোষণ পায় না।
বাংলাদেশে মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ফওজিয়া মুসলিম বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে মানুষ এখন ভাবতে শুরু করেছে। আগে লুকিয়ে রাখা বা গোপন করার প্রবণতা ছিল, সেটি এখন কমেছে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে দেশে আজ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস এবং ২৪তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য পরিবর্তনমুখী পদক্ষেপ। ’