হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা আরো জোরদারে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ঢেলে সাজানো হচ্ছে পাস অনুমোদন ব্যবস্থাপনা। এই নীতিমালা বাস্তবায়নে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ইস্যু করা ১০ হাজার পাস বাতিল করা হচ্ছে।
নতুন নীতিমালার আলোকে প্রয়োজনীয় শর্তপূরণ সাপেক্ষে বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের জন্য চিপসসংবলিত নতুন ডিজিটাল পাস দেওয়া হবে।
তবে দর্শনার্থী ক্যাটাগরিতে ভিআইপিসহ নানা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ইস্যু করা একাধিক পাস বাতিল করা হবে। এরই মধ্যে গত পাঁচ বছরে পাস গ্রহীতাদের তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের এখনো ১০ হাজার পাস বাইরে আছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান একাধিক পাস নিয়ে রেখেছে। কখনো কখনো এর অপব্যবহারও হচ্ছে। আমরা জানুয়ারি মাসের মধ্যে এসব বাতিল করে দেব। বিশ্বের কোনো বিমানবন্দরে একজন যাত্রী ছাড়া অন্যদের ঢুকতে দেওয়া হয় না। ’
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অ্যাক্সেস কন্ট্রোল ও পাসের নীতিমালায় আমরা পরিবর্তন এনেছি। নতুন নিয়মে আমরা পাস নিয়ে অনিয়ম ও অপব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসতে পারব বলে আশা করি। ’
সূত্র জানায়, বিমানবন্দরে সরকারি-বেসরকারি প্রায় ৩০টি সংস্থা কাজ করে। এ ছাড়া রয়েছে ব্যাংক, বীমা, হোটেল, রেস্তোরাঁ, কার পার্কিং, দোকানপাটসহ বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এদের প্রত্যেককেই নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের প্যাডে লিখিত দিয়ে গ্রহণ করতে হয় নিরাপত্তা পাস। এ প্রক্রিয়ায় বিমানবন্দরের ইস্যুকৃত পাস হাতে পাওয়ার আগে পুলিশের ছাড়পত্র নিতে হয় তাদের।
এত নজরদারির পরও একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে গুরুত্বপূর্ণ পাস নিয়ে সংরক্ষিত বিমানবন্দর এলাকায় ঢুকে নানা অপকর্ম ঘটিয়ে সটকে পড়ছে অপরাধীরা।
শাহজালালের নিরাপত্তা পাস নিয়ে বছরের পর বছর ধরে তারা বিমানবন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় অপকর্ম করে আসছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বহিরাগতরাও টাকার বিনিময়ে পেয়ে যাচ্ছে বিমানবন্দরে প্রবেশের নিরাপত্তা পাস। এ পাস ব্যবহার করে তারাও চোরাচালানসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজ করে আসছে। এতে হুমকির মুখে বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। শাহজালালে প্রায়ই ধরা পড়ছে স্বর্ণসহ নানা অবৈধ পণ্যের চালান। এদের মধ্যে অনেকে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
সম্প্রতি শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিআইপি যাত্রীর প্রটোকলে আসেন সিরাজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তিনি নিয়েছিলেন প্রটোকল পাস (নম্বর-০০২৮)। বিমানবন্দরের গ্রিন চ্যানেল দিয়ে দুটি ব্যাগ নিয়ে যাওয়ার সময় শুল্ক কর্মকর্তাদের সন্দেহ হলে তাঁকে চ্যালেঞ্জ করা হয়। নাটকীয়ভাবে সেই সময় সিরাজ পালিয়ে গেলেও তাঁর ব্যাগ থেকে ১৬ কেজি ১০০ গ্রাম স্বর্ণ ও ১০০টি মোবাইল ফোন সেট জব্দ করে ঢাকা কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, শাহজালালের নিরাপত্তা পাস নিয়ে শুধু বেবিচক কর্তৃপক্ষই চিন্তিত নয়, বিষয়টি মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়েরও। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিতেই পাস বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভিআইপি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কেউ যদি স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত হয়, তাঁকে ছাড় দেওয়া হবে না।
বিমানবন্দরের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন ও মিডিয়া) মো. জিয়াউল হক বলেন, ‘পাস নিয়ে বিমানবন্দরে অপব্যবহার হচ্ছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এজেন্সি এই অপরাধে যুক্ত অনেককে আটক করেছে। পুরনো পাস বাতিলের উদ্যোগ ভালো। এখন যাদের একান্ত প্রয়োজন, তাদের যাচাই-বাছাই করে দিলে বিমানবন্দর আরো নিরাপদ হবে। ’
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ কাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেন, ‘বিমানবন্দরে প্রবেশের ক্ষেত্রে পাস ব্যবহারের নতুন নীতিমালা প্রয়োগে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে বিমানবন্দরে নতুন ডিজিটাল অ্যাক্সেস কন্ট্রোল ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার স্থাপন করা হয়েছে। আশা করছি, নতুন ব্যবস্থায় বিমানবন্দর আরো সুন্দর ও সুশৃঙ্খল হবে। ’