সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যাকাণ্ডের ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও রহস্য এখনও উন্মোচিত হয়নি। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত ও আদালতের নির্দেশনার পরও মামলাটি এখন কার্যত স্থবির অবস্থায়।
দৈনিক আমার দেশ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিবি, র্যাব ও বর্তমানে পিবিআইয়ের নেতৃত্বাধীন টাস্কফোর্স—সব সংস্থাই তদন্ত করেছে, তবে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী বা হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে পারেনি। তদন্তের আলামত সংগ্রহেও ঘাটতি রয়ে গেছে। সাগর ও রুনির ব্যবহৃত ল্যাপটপ ও দুটি মোবাইল ফোন এখনও উদ্ধার হয়নি, যা মামলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত।
তদন্ত কর্মকর্তাদের দাবি, হত্যাকাণ্ডটি দুইজনের কাজ বলে ধারণা পাওয়া গেলেও তাদের পরিচয় এখনো অজানা। মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে একাধিকবার ফরেনসিক পরীক্ষা, ডিএনএ বিশ্লেষণ ও সাক্ষ্য যাচাই করা হলেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
মামলার সর্বশেষ অগ্রগতিতে আদালত আগামী ৩০ নভেম্বর নতুন প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ১২১ বার সময় নেওয়া হয়েছে। পিবিআই জানিয়েছে, “তদন্ত অব্যাহত আছে, তবে নতুন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।”
সাগর–রুনির পরিবার ও সহকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “এটি শুধু একটি দম্পতির হত্যাকাণ্ড নয়, বরং দেশের গণমাধ্যমের নিরাপত্তা ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থার প্রশ্ন।”
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর রাজাবাজারে নিজ বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি। হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী “৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উদ্ঘাটনের” ঘোষণা দিলেও আজও তা আলোর মুখ দেখেনি।
আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, “তদন্তে রাজনৈতিক প্রভাব, প্রমাণ সংরক্ষণে গাফিলতি এবং সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবই এই ব্যর্থতার মূল কারণ।”
১৩ বছর পরও কোনো কার্যকর ফল না আসায় এই হত্যা মামলা এখন দেশের বিচারব্যবস্থার অদক্ষতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতির এক প্রতীকী উদাহরণে পরিণত হয়েছে।