আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করাই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা। ২ মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সুশাশনের জন্য নাগরিক-সুজন আয়োজিত 'নতুন নির্বাচন কমিশনের সামনে চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ কথা জানান।
বৈঠকে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা বলেন, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে হলে তার নিজস্ব কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা বিসিএস ক্যাডার ব্যবস্থা চালু করতে হবে। কারণ নির্বাচনকালীন সময়ে বাইরে থেকে যে জনবল নিয়োগ দেওয়া তাদের উপর কমিশনের তেমন নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
তিনি বলেন, কমিশনের হারিয়ে যাওয়া আস্থা ধীরে ধীরে ফিরিয়ে আনতে হবে। নির্বাচন কমিশনের সকল কর্মকর্তাদের কথা বার্তা, আচার ব্যবহারে সবার যেন আস্থা থাকে যে এরা কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করবে না।
এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। জানতে হবে তারা কি চান। আর ইভিএম তৈরিতে এমন লোকদেরকে দায়িত্ব দিতে হবে যেন তাদের উপর সবার আস্থা থাকে। যাকে তাকে দিয়ে এটা করা ঠিক হবে না।
সুজনের নির্বাহী সদস্য আলী ইমাম মজুমদার বলেন, স্টেক হোল্ডারদের মতামত নিয়ে ই-ভোটিংয়ের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে বর্তমান কমিশনকে। ছোট ছোট নির্বাচন করে তারা প্রমাণ করবেন যে তারা সৎ, দক্ষ, যোগ্য এবং দেশপ্রেমিক। যাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের প্রতি মানুষের আস্থা থাকে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগে.জে. (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, জনগনের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনই নতুন কমিশনের বড় চ্যালেঞ্জ। কারন মানুষের মনে আশংকা আমার ভোট আমি দিতে পারবো কিনা। এছাড়া আগামী সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করাও বড় চ্যালেঞ্জ। সংবিধানের পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না। এমন ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে কোড অব কন্ডাক্ট সংশোধন করা যায় কিনা এটাও কমিশনকে ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আর জাতীয় সংসদ নির্বাচন এক নয়। তাই উপজেলা বা সিটি নির্বাচনেরর মাধ্যমে কমিশনের নিরপেক্ষতা প্রমাণ হবে না। কারন আমাদের মনে রাখতে হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হচ্ছে ক্ষমতার পালা বদলের বিষয়। তাই শুধু নিরপেক্ষ ইসি দিয়ে সুষ্ঠ নির্বাচন আশা করা যায় না। নির্বাচনের সময় কেমন সরকার থাকবে তারা কিভাবে ইসিকে সহযোগীতা করবে তার উপর সুষ্ঠ নির্বাচন নির্ভর করবে।
সাবেক বিচারপতি আব্দুল মতিন বলেন, নির্বাচনে জনগণের মতামতের প্রতিফলন যাতে ঘটে, কমিশনকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য সব ধরণের ক্ষমতা কমিশনকে দেওয়া আছে। এখন কমিশন সেগুলো ব্যবহার করবেন কিনা সেটা তাদের বিষয়।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশনের সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। আগামী সংসদ নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সব রাজনৈতিকদলেরর জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব।
তিনি বলেন, এই নির্বাচন কমিশনের সামনে দু'টি বিকল্প আছে। একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে প্রশংসিত হওয়া। দ্বিতীয়টি হলো একটি অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে ইতিহাসে নিন্দনীয় হওয়া। একুশ শতকে বাঙালি জাতি নিন্দনীয় হওয়াও অপছন্দ করে না। নতুন কমিশন কেবল দায়িত্ব নিল কাজেই এখনই তাদের নিয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না।
সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের শিক্ষক আসিফ নজরুল,সুজনের সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার প্রমুখ।