স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন সরকারি দফতরে সম্প্রতি পাঠানো কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিকালে (২০১৩ থেকে ২০১৬) জঙ্গিগোষ্ঠীর মাধ্যমে সংঘঠিত হত্যাকাণ্ড সম্পৃক্ত চাঞ্চল্যকর মামলার সংখ্যা ৫০টি।
এরমধ্যে ১৪টি মামলার চার্জশিট ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে এবং একটি মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৩৫টি তদন্তাধীন মামলার চার্জশিট দ্রুততার সাথে দেওয়ার তাগাদা দিয়েছে আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের এই কমিটি।
কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণীর তথ্যানুযায়ী, ৫০টি মামলার মধ্যে ৪৫টি মামলার আসামিদের সনাক্ত করা গেছে। এরমধ্যে রংপুরে জাপানি নাগরিক কুনিও হোসি ও গুলশানে ইতালীয় নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যা মামলাসহ মোট ১৪টি মামলার চার্জশিট প্রদান করা হয়েছে।
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে আহ্বায়ক করে করা এই কমিটি দ্রুততার সাথে চার্জশিট প্রদানের তাগাদা দেওয়ার পাশাপাশি সর্বসম্মতিক্রমে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিজ নিজ দায়িত্ব আরও সতর্কতা, আন্তরিকতা ও যথাযতভাবে পালনের অনুরোধ জানিয়েছে।
গত ২৫ জুলাই স্বাক্ষরিত কার্যবিবরণীর তথ্যে দেখা গেছে, কমিটি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে জঙ্গি কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্টতার অপরাধে অভিযুক্ত এবং ফাঁসির আদেশাধীন ব্যক্তিদের মামলার রায় দ্রুত কার্যকর করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে।
জঙ্গি তৎপরতায় সম্পৃক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারেও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছে কমিটি। কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, জঙ্গি তৎপরতার সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়ে যে সকল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম বারবার আসছে সে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম মনিটরিং করতে হবে।
এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রমসহ অন্যান্য শিক্ষকদের কার্যক্রমের বিষয়ে নিয়মিত গোয়েন্দা মনিটরিং করতে হবে। এছাড়া জঙ্গিবাদ প্রতিহত করতে জুম্মার নামাজ শেষে জঙ্গিবাদবিরোধী বয়ানের ব্যবস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মীয় সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যের মাধ্যমে যাতে ধর্মীয় উগ্রবাদ ছড়িয়ে না পরে সে বিষয়টিও মনিটরিং করতে হবে।
মন্ত্রিসভা কমিটি কূটনৈতিক এলাকা গুলশানসহ অন্যান্য এলাকা থেকে অনুমোদনবিহীন হোটেল ও রেস্তোরাঁ সরিয়ে ফেলার তাগাদা দেওয়ার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ হোটেল ও স্থাপনাসমূহে নিরাপত্তার জন্য অস্ত্রসহ আনসার মোতায়েনের সুপারিশ করেছে।
দেশের সাম্প্রতিক আইন শৃঙ্খলার পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি পুলিশ সদর দফতর, ডিজিএফআই, র্যাব, এনএসআই, বিজিবি এবং এসবি’কে নির্দেশনা দিয়েছে। যাতে কোনো ধরণের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও সন্ত্রাসী হামলা প্রতিহতসহ প্রধান প্রধান অপরাধ যথা ডকাতি, দস্যূতা, হত্যা, ধর্ষণ, শিশু ও নারী নির্যাতন ইত্যাদি বৃদ্ধি না পায়। গোয়েন্দা সংস্থাসমূহকে সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে তৎপর থাকতে বলেছে উচ্চ পর্যায়ের এই কমিটি।
আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে বিদেশিদের নিরাপত্তার ইস্যুটিও আলোচিত হয়। বৈঠক থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিনিয়োগ বোর্ড ও পুলিশ সদর দফতরকে বলা হয়েছে, বিদেশিরা যাতে এ দেশে আগমনে কিংবা বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত না হয় সেজন্য তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে আস্থা প্রদানসহ উদ্বুদ্ধকরণের কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
কার্যবিবরণীতে উল্লেখ্য করা হয়েছে, সভার সকল সদস্যগণ গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনার সফল পরিসমাপ্তির জন্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন। একইসঙ্গে সদস্যগণ জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আইন শৃঙ্খলা কমিটির আরেকটি বৈঠকে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের জঙ্গি তৎপরতা রোধকল্পে প্রচার প্রচারণা বৃদ্ধির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ২৪ জুলাই ড. মোজাম্মেল হক স্বাক্ষরিত বৈঠকের কার্যবিবরণীতে আরও দেখা গেছে, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের জঙ্গিগোষ্ঠী কর্তৃক ঘটানো হত্যাকাণ্ড সম্পৃক্ত চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো মনিটরিংয়ের তাগাদা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আইজি প্রিজনকে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেফতারকৃত আসামিদের মামলাগুলো অনুসরণের উদ্দেশে মামলার আসামিদের একটি পুর্ণাঙ্গ ডাটাবেইজ তৈরি করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।