প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অটিজমসহ সকল ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এবং পরিবার ও সমাজে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে কর্মসংস্থানের বিকল্প নেই। কাজের প্রতি এসকল বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের একাগ্রতা থাকে অনেক বেশি এবং কর্মক্ষেত্রে তাদের উপস্থিতিও অন্যদের তুলনায় সন্তোষজনক। চাকরির সুযোগ দিয়ে প্রতিবন্ধীদের সূক্ষ্ম মেধা বিকাশের সুযোগ সৃষ্টিতে এগিয়ে আসতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সকল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে উপযোগী কর্মক্ষেত্র চিহ্নিত করার কাজ চলছে। এছাড়া বিসিএসসহ সকল শ্রেণির সরকারি চাকরিতে অটিজমসহ সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কোটা সংরক্ষিত রয়েছে।
গতকাল রবিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘দশম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস ২০১৭’ উপলক্ষে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রতিবন্ধী শিশুদের সাধারণ বিদ্যালয়ে ভর্তি না করার মন-মানসিকতা ত্যাগ করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবন্ধিতার কারণে কোনো শিশুকে শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে রাখা যাবে না। তিনি বলেন, ‘অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সকল শিশু সাধারণ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করবে। ফলে এ ধরনের সকল শিশু নিজ পরিবার থেকে বাড়ির নিকটবর্তী বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবে। অন্যদিকে সাধারণ শিশুরা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সাথে মিশে মানুষের ভিন্নতা সম্পর্কে জানবে এবং ভিন্নতাকে মেনে নেওয়ার শিক্ষা পাবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ২০১০ সালে একটি বাস্তবমুখী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছি। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘প্রতিবন্ধিতার কারণে কোন শিশুকে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে দূরে রাখা যাবে না’। তিনি বলেন, এতে করে শিশুরা ছোটবেলা থেকেই সহনশীলতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধের শিক্ষা লাভ করবে। এতে গোটা সমাজ ব্যবস্থাই উপকৃত হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিরাও বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করে কম্পিউটার, ইন্টারনেটেও অন্য সবার মতোই সমান পারদর্শিতার সাথে কাজ করতে সক্ষম। প্রতিবন্ধীবান্ধব সফটওয়্যার, অডিও-ভিডিও শিক্ষা উপকরণ, অবকাঠামো, প্রযুক্তি উদ্ভাবনসহ তথ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে তিনি সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতি অনুরোধ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অটিজম একটি স্বাভাবিক অবস্থা। এটি শিশুর শৈশব থেকেই দেখা দিতে পারে। তিনি বলেন, কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশে অটিজম সম্পর্কে মানুষের তেমন কোনো ধারণা ছিল না। আমার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ এর নিরলস প্রচেষ্টায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অটিজমের গুরুত্ব ও সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সে এখন বাংলাদেশে অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন। তার উদ্যোগে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ‘অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু ও তাদের পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যসেবা এবং আর্থ-সামাজিক সহায়তা বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রস্তাব গৃহীত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা তাদের ভবিষ্যত্ জীবনের কথা বিবেচনায় নিয়ে এই আইনের আওতায় একটি নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট গঠন করেছি। ট্রাস্টের কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে আমরা ৪১ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি এবং আমি চাই সমাজের বিত্তবানরা এখানে সহায়তা করবেন। শেখ হাসিনা বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য নীতি প্রণয়নের কাজ চলছে। প্রতিবন্ধীদের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ‘ডিজ্যাবিলিটি ইনফরমেশন সিস্টেম’ সফটওয়্যার চালু করা হয়েছে। অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন, মূক ও বধির শিশুদের সুষ্ঠুভাবে পাঠদানের লক্ষ্যে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্নদের জন্য সরকারের সুযোগ-সুবিধা প্রদান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তিদের বিনামূল্যে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ঢাকার মিরপুরে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ক্যাম্পাসে অটিজম রিসোর্স সেন্টার ও একটি ‘স্পেশাল স্কুল ফর চিলড্রেন ও উইথ অটিজম’ স্থাপন করা হয়েছে। এখানে প্রায় ৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিবন্ধী উন্নয়ন কমপ্লেক্স নির্মিত হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদের সকল কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অটিজম প্রকৃতির বিচিত্র খেয়াল হলেও অটিজম বৈশিষ্ট্যের অধিকারী অনেকেই অত্যন্ত মেধাবী হয়। তাদের রয়েছে অনন্য প্রতিভা। তাদের প্রতিভাকে বিকশিত করাই আমাদের লক্ষ্য। বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন, ডারউইন, নিউটন জীবনের একটা সময় অটিজমের মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছেন। সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী উইলিয়াম বাটলার ইয়টস্, ড্যানিস কবি হ্যানস্ এন্ডারসন, সুরস্রষ্টা বিথোভেন, মোজার্ট প্রতিবন্ধী ছিলেন। বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংস্ আজীবন প্রতিবন্ধী থাকলেও তার আবিষ্কার থেমে থাকেনি।
২০০৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ২ এপ্রিল দিবসটি বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। ২০০৮ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হচ্ছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘স্বকীয়তা ও আত্মপ্রত্যয়ের পথে।’ প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে অটিজম অতিক্রমে সফল ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থাকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে নীলবাতি প্রজ্বালন করেন।
অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্ব শেষে অটিজম বৈশিষ্ট্যের অধিকারী শিল্পীদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. মো. মোজাম্মেল হোসেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জিল্লার রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি একজন মমতাময়ী মায়ের মতো। আর সেই মমতা নিয়েই তিনি প্রতিবন্ধী শিশুদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া অতীতে এদেশের কোনো সরকার প্রধান করেননি। প্রতিবন্ধীদের জন্য সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের গৃহীত কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের কল্যাণে ঠিক মায়ের মতোই পুতুল অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের সেনাপ্রধানের সাক্ষাত্
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, প্রতিবেশী কোনো দেশের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের প্রচেষ্টার পাশাপাশি বাংলাদেশ এই অঙ্গীকার দৃঢ়ভাবে পালন করে যাচ্ছে।
ভারতের সফররত সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত্ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।
প্রতিবন্ধীদের মেধা বিকাশে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে :প্রধানমন্ত্রী
আজ পালিত হবে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস
দেশে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা অর্ধ কোটির বেশি। তবে মূল ধারায় সম্পৃক্ত করা গেলে প্রতিবন্ধীরাও নিজেদের অধিকার রক্ষায় সচেতন হবে এবং যোগ দেবে উৎপাদনশীল কাজে। এখন সহায়তার পাশাপাশি দরকার সামাজিক সচেতনতা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন প্রতিবন্ধীর জীবনে বঞ্চনা ও বিচ্ছিন্নতা একটি পর্যায়ক্রমিক ধারা সৃষ্টি করে। প্রায় সব অঞ্চল ও জনগোষ্ঠীতে এমনকি সরকারি-বেসরকারি উভয় প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে অবহেলা করা হয়। তাদের প্রতি অসম দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ প্রবল।
রবিবার (২ এপ্রিল) পালিত হবে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। এ উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। অটিস্টিক ব্যক্তিদের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গৃহীত নানা উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ‘অটিজম’ বিষয়টি আজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে একটি অত্যাবশ্যকীয় ইস্যু হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা, গ্লোবাল অটিজম পাবলিক হেলথ ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশের জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান সায়মা হোসেনের অবদান সবচেয়ে বেশি।
গ্লোবাল অটিজম পাবলিক হেলথ ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশের জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান সায়মা হোসেন ২০১২ সালে জাতিসংঘে অটিস্টিক শিশু ও তার পরিবারের সহায়তায় বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে অটিজম আক্রান্ত শিশু ও তার পরিবারের জন্য আর্থ-সামাজিক সহায়তা শীর্ষক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। যা সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়।
দেশে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা উপবৃত্তি, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুল স্থাপন, ঢাকার মিরপুরে জাতীয় বিশেষ শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ, ৬৪ জেলায় ৬৮টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র এবং অটিজম রিসোর্স সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। দেশব্যাপী প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিকসহ সবক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের সমধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুত সরকার।
পাশাপাশি দেশি-বিদেশি সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, সুশীল সমাজ ও বিত্তবানদের প্রতিবন্ধী এবং অটিস্টিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবন্ধী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে প্রান্তিক ও বঞ্চনার শিকার প্রতিবন্ধী নারী ও শিশুরা। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের মেধা ও যোগ্যতা প্রদর্শনের সুযোগ পাচ্ছে না।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত গণমাধ্যমকে বলেন, অটিজম সম্পর্কে এখনও দেশের মানুষের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে অটিস্টিক শিশুদের ব্যবহারের কারণে পাগল বলা হয়। এমনকি ভুল চিকিৎসা করে অনেক শিশুকে অকালে মেরে ফেলা হয়। অটিস্টিক শিশুরা বিশেষ কোনো ক্ষেত্রে খুব দক্ষ হয়। তাই এদের প্রতিবন্ধী হিসেবে চিহ্নিত না করে বিশেষ শিশু বলা উচিত।
দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলে অটিজম বিষয়ক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চ্যাম্পিয়ন হলেন সায়মা
অটিজম এবং নিওরোডেভলোপমেন্টাল ডিজঅর্ডার বিষয়ক বাংলাদেশ ন্যাশনাল এডভাইজারি কমিটির চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলে অটিজম বিষয়ক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)’র চ্যাম্পিয়ন হিসেবে মনোনীত হয়েছেন।
নয়াদিল্লিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় বিষয়ক হু’র আঞ্চলিক অফিস ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম দিবস পালন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আজ এ ঘোষণা দেয়।
জাতিসংঘ স্বাস্থ্য সংস্থাটি বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসের প্রাক্কালে হু’ চ্যাম্পিয়ন হিসাবে সায়মা ওয়াজেদের নাম ঘোষণা দিয়ে বলেছে, তিনি জাতীয় নীতিমালা ও কৌশল বিষয়ে প্রচারণার জন্য অঞ্চলের ১১টি সদস্য দেশের সাথে এডভোকেসিতে সহায়তা দেবেন। হু তাকে অটিজমের জন্য একজন শক্তিশালী প্রচারক হিসাবে মনোনীত করেছে।
হু’র আঞ্চলিক পরিচালক ড. পুনম খেত্রপাল সিং বলেন, সায়মা ওয়াজেদ হোসেন তার নিজ দেশ বাংলাদেশে স্বাস্থ্য এজেন্ডায় অটিজমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালান এবং অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার ও অন্যান্য মানসিক এবং নিউরোডেভলোপমেন্টাল ডিজঅর্ডারস এ অঞ্চলিক ও বৈশ্বিক আকর্ষণে সহায়তা করেন।
তিনি বলেন, সদস্য দেশগুলোতে সচেতনতা সৃষ্টি এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিতে আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন হিসাবে তার সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অটিজমের জন্য একজন আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন হিসাবে সায়মা ওয়াজেদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা করেন।
ড. খেত্রপাল সিং আরো বলেন, প্রতি দশ হাজার লোকের মধ্যে ১৬০ জন অথবা প্রতি ৬২ জনের মধ্যে একজন অটিজম আক্রান্ত। তিনি বলেন, স্বল্প এবং মধ্যম আয়ের দেশসমূহে অটিজম শিশুরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পায় না। তাদের জীবন খুবই দুর্বিসহ। তাদের খুব অল্প সংখ্যকের বিয়ে হয়।
সায়মা ওয়াজেদ তার বিভিন্ন ভূমিকা এবং যোগ্যতায় এএসডি বিষয়ে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তিনি ২০১১ সালে জুলাই মাসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অটিজম নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন এবং মেন্টাল হেলথ বিষয়ে হু’র গ্লোবাল এক্সপার্ট এডভাইজারি প্যানেলের একজন সদস্য হন।
পুতুল নামে পরিচিত সায়মা ওয়াজেদ হোসেন সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে এই ফাউন্ডেশন কাজ করে। এটি হু’র মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক হু’র এক্সপার্ট এডভাইজারি প্যানেলের সদস্য। তিনি ২০১১ সালে একটি আঞ্চলিক সম্মেলনের আয়োজন করে অবহেলিত এই বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসেন। এই সম্মেলনে ভারতের সে সময়ের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস দলের প্রধান সোনিয়া গান্ধীসহ আঞ্চলিক নেতৃবৃন্দ যোগ দেন। তার এ প্রচেষ্টার ফলে নিওরোডেভলোপমেন্টাল ডিজএবলিটি প্রটেকশন ট্রাস্ট এ্যাক্ট ২০১৩ পাস হয়। তার দেয়া প্রস্তাবের আলোকে জাতিসংঘ কয়েকটি প্রস্তাব গ্রহণ করে।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে হু’র দেয়া পাবলিক হেলথ এ্যাওর্য়াড লাভ করেন। তিনি বিভিন্ন জাতীয় আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক কমিটি ও নেটওয়ার্কের নেতৃত্ব দেন।
তিনি টরেন্টোর অন্টোরিও ফিজিওলোজিকেল এসোসিয়েশন এবং অটিজম বিষয়ক এবং গ্লোবাল অটিজম বাংলাদেশ বিষয়ক এনডিডি’র একজন আন্তর্জাতিক পরার্মশক।
বাংলাদেশ, ভূটান, উত্তর কোরিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল, মিয়ানমার, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড ও তিমুর হু’র দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের সদস্য রাষ্ট্র।
মৌলভীবাজারের বড়হাটের জঙ্গি আস্তানায় একটু পর পর গুলির শব্দ !
মৌলভীবাজারের বড়হাট এলাকার জঙ্গি আস্তানা থেকে একটু পর পর গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে বলে বৃহস্পতিবার (৩০মার্চ) সকালে সেখানে উপস্থিত বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। আস্তানাটি ঘিরে রেখেছে আইন শৃংখলাবাহিনী। নাসিরপুরস্থ বাগানবাড়ির অভিযান শেষে বড়হাটের আস্তানায় অভিযান চালাবে ‘সোয়াট’।
এদিকে সিলেটের মতো মৌলভীবাজারেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর মধ্যে নাসিরপুরস্থ বাগানবাড়িতে বিশেষ বাহিনী ‘সোয়াত’ সদস্যরা তল্লাশি চালাচ্ছেন। এখানকার তল্লাশি শেষে তারা বড়হাটের আস্তানায় অভিযান শুরু করবেন। তবে বৈরি আবহাওয়ায় অভিযান আরও বিলম্বিত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বুধবার সন্ধ্যায় সেখানে অভিযান শুরু করলেও পরে তা স্থগিত করা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে তারা আস্তানাটিতে তল্লাশি শুরু করেন। তবে রাতের অভিযানের মুখেই এ আস্তানার জঙ্গিরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে বড়হাটের আস্তানাটি আইনশৃংখলা বাহিনী ঘিরে রাখলেও সেখানে একটু পরপর গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। সকাল থেকেই ওই এলাকার আশপাশে উৎসুক জনতার ভিড় ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
মৌলভীবাজারের দু'টি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শুরু হবে যেকোন সময়
মৌলভীবাজারের দু'টি জঙ্গি আস্তানার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে আসা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম বলেছেন, আমি এলাকা দুটি রেখি করলাম। বৈরি আবহাওয়ার কারণে এখন পর্যন্ত অভিযান শুরু করা সম্ভব হয়নি।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর তিনি সাংবাদিকদের আরও বলেন, আমরা নতুন করে অভিযানের পরিকল্পনা করছি। আশা করছি শিগগিরই অভিযান শুরু হবে। দুটি স্থানে কতজন জঙ্গি আছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনুমানের উপর কত জন আছে তা বলা যাচ্ছে না।
এদিকে ভোর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে পুরোদমে নাসিরপুরে অভিযান শুরু করতে না পারলেও সকাল ১১টা ২০ মিনিট থেকে গতরাতের অভিযান স্থগিতের পর দ্বিতীয় দফায় অভিযান শুরু হয়েছে বলে একটি নির্ভর যোগ্য সূত্রে জানা যায়।
জনগণের জীবনমানের উন্নয়নে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর দল ও সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সাধারণ জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন করা।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে সাধারণ জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন করা এবং আমরা সে লক্ষ্য অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ’
ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্রগ্রেসিভ এ্যালাইয়েন্স অব সোসালিস্ট এন্ড ডেমোক্র্যাট গ্রুপের একটি প্রতিনিধিদল আজ সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।
এমি লেইজ এমপি ৭ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।
তৈরি পোশাক খাত সম্পর্কে ইউরোপীয় এমপিদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই খাতের উন্নয়নে তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিধিদলের সদস্যদের আশ্বস্ত করেন যে, এই খাতে যদি অমীমাংসিত কোন বিষয় থেকে থাকে তাহলে তাঁর সরকার তা মিটিয়ে ফেলবে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী মো. আবুল কালাম আজাদ, মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াউদুন উপস্থিত ছিলেন।
নিহত জঙ্গিদের মধ্যে একজন মুসা হতে পারে !
সিলেটের শিববাড়ি আতিয়া মহলের জঙ্গি আস্তানায় নিহত এক যুবকের সঙ্গে নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা মঈনুল ইসলাম ওরফে মুসার চেহারার মিল পাওয়া গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারাও ধারণা করছেন, নিহতদের মধ্যে একজন মুসা হতে পারে। অভিযানের আগে তাদের কাছে তথ্য ছিল সিলেটের এই জঙ্গি আস্তানায় মুসা অবস্থান করছে। তবে তার পরিচয় নিশ্চিত হতে রাজশাহীর বাগমারায় মুসার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। একইসঙ্গে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেও মিলিয়ে দেখা হবে। নিহত জঙ্গিদের একজন মুসা কিনা তা জানতে কিছু সময় লাগবে বলে জানান সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এস এম রোকন উদ্দিন। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী লাশের পরিয় জানার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করেই পরিচয় নিশ্চিত করা হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, সিলেটের জঙ্গি আস্তানায় মুসা অবস্থান করার কারণেই অভিযান শেষ করতে চার দিন লেগে যায়। কারণ মুসা কেন্দ্রীয় আস্তানা হিসেবে এখানে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক মজুদ করেছিল। একইসঙ্গে অভিযান চলাকালে ভেতর থেকে মুসা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাইরে যোগাযোগ করে ‘কাউন্টার অ্যাটাকের’ নির্দেশনা দিয়েছিল বলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের ধারণা। ফলে সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সিলেটের শিববাড়ি এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে রাখা হয়।
আতিয়া মহলে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে নিহত চার জঙ্গির দুজনের লাশ পুলিশের কাছে হস্তান্তরের পর তা মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত লাশগুলোর চেহারা ঝলসে গেছে। নারী জঙ্গির মাথার চুল পুড়ে গেছে। শরীরে ইট-সুরকি মাখানো। আর পুরুষ জঙ্গির কোমরের অংশ উড়ে গেছে। কোমরের অংশ দেখে ধারণা করা হচ্ছে তার কোমরে সুইসাইডাল ভেস্ট ছিল। আত্মঘাতী হওয়ার কারণে তার নাড়ি-ভুঁড়িও বের হয়ে গেছে। এই জঙ্গির একটি হাতও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বাকি একজনের সঙ্গে সুইসাইডাল ভেস্ট রয়েছে। সেটি বিস্ফোরিত হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার পর মঙ্গলবার তাদের লাশ উদ্ধার করা হবে।
মিরপুরের রূপনগরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত মেজর জাহিদের হাত ধরে জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হয় মঈনুল ইসলাম মুসা। তাদের আরেক সহযোগী তানভীর কাদেরীও নিহত হয় ঢাকার আজিমপুরের অভিযানে। মুসা উত্তরার লাইফ স্কুলে এক সময় শিক্ষকতা করলেও পরে নব্য জেএমবিতে যোগ দিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ কথিত হিজরত করে। গত বছরের পহেলা জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর ধারাবাহিক জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে একের পর এক শীর্ষ জঙ্গি নেতারা গ্রেফতার ও নিহত হওয়ার পর মুসা নব্য জেএমবির হাল ধরেন বলে গোয়েন্দাদের কাছে খবর ছিল।
আমার মতো আর কোনও মায়ের বুক যেন খালি না হয় !
অপু আমার একমাত্র ছেলে। তাকে হারিয়ে আমি সবকিছু হারিয়ে ফেলেছি। এখনই ব্যবস্থা নিন যাতে আমার মতো আর কোনও মায়ের বুক খালি না হয়। কথাগুলো বলছিলেন সিলেটে বোমা বিস্ফোরণে নিহত ওয়াহিদুল ইসলাম অপুর মা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, দেশ থেকে সব জঙ্গি নির্মূল করুন। নইলে আরও অনেক মায়ের বুক খালি হবে। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার জালোপাড়ার চাঁদনীঘাট গ্রামে অপুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার মা বিলাপ করছেন। প্রতিবেশী, স্বজনরাও যেন সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন।
বিস্ফোরণে নিহত অপুর বাবা দুই বছর আগে মারা গেছেন। চার ভাইবোনের মধ্যে অপু সবার বড়। বড় বোন সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) সমাজকর্ম বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। আর ছোট দুই বোন স্কুলে পড়ালেখা করছে। অপু নিজে ছিলেন মদন মোহন কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। শাবিতে অধ্যয়নরত অপুর বোন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি আমার ভাইকে হারিয়ে ফেলেছি। তার এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানাধীন শিববাড়ি এলাকায় আতিয়া মহল নামে পাঁচতলা বাড়ির নিচতলায় জঙ্গিরা অবস্থান করছে জানতে পারে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে ওই বাড়ির ভেতর থেকে গ্রেনেড ছোঁড়া হয়। পরে ঢাকা থেকে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াতকে পাঠানো হয় ঘটনাস্থলে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সন্ধ্যা থেকে পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয় সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো দল। পরে ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় আতিয়া মহলের পাশে দুই দফা কাউন্টার অ্যাটাকে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জন নিহত হন যার মধ্যে অপুরও ছিলেন। ওই হামলায় অপুর চাচাতো ভাই পাপ্পু আহত অবস্থায় সিলেট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এছাড়াও আহত হয়েছেন র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানসহ অন্তত ৫০ জন।
বোমা বিস্ফোরণে নিহত ও আহতরাও পুলিশের ‘সন্দেহের’ খাতায় !
সিলেটে জঙ্গি আস্তানার কাছে ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণে নিহত ও আহতদের কেউ কেউ রয়েছেন পুলিশের ‘সন্দেহের’ খাতায়। বোমা হামলার ঘটনার সাথে এদের মধ্যে কেউ জড়িত কিনা, সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
গত শনিবার সন্ধ্যায় সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি পাঠানপাড়া এলাকায় জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলের সামান্য দূরে বোমা বিস্ফোরণে ছয় জন নিহত হন। ঘটনাস্থলেই মারা যান চার জন। বাকিরা ওসমানী হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এ ঘটনায় আহত হয় আরও অন্তত ৪৪ জন।
নিহতরা হলেন নগরীর জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম ও আদালতে পুলিশের পরিদর্শক চৌধুরী মো. আবু কায়সার, মহানগর ছাত্রলীগ নেতা ওয়াহিদুল ইসলাম অপু ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা জান্নাতুল ফাহিম ছাড়াও নেত্রকোণার শহীদুল ইসলাম ও সুনামগঞ্জের ছাতকের দয়ারবাজার এলাকার কাদিম শাহ রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, শহীদুল ইসলাম ও কাদিম শাহ সিলেট নগরীর দাড়িয়াপাড়ায় প্রাইম লাইটিং এন্ড ডেকোরেটর্স নামক একটি প্রতিষ্ঠান চালাতেন।
হামলায় নিহত ছয় জনের মধ্যে ওসমানী হাসপাতাল থেকে পুলিশের অনুমতি সাপেক্ষে চার জনের লাশ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে বাকি দু'জনের ব্যাপারে তদন্ত করছে পুলিশ। এ দু'জন বোমা হামলার সাথে সম্পৃক্ত কিনা, সে বিষয়টি নিশ্চিত হতে চাইছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এদিকে, হামলায় আহত কয়েকজনকেও নজরদারি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
বোমা বিস্ফোরণে নিহতদের মধ্যে কাউকে সন্দেহ করা হচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এসএম রোকন উদ্দিন বলেন, ‘তদন্ত করে নিহতদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। নিহতদের স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সিলেটের বাইরের যে দু'জন নিহত হয়েছেন, তাদের ব্যাপারেও অনুসন্ধান করা হচ্ছে। অনুসন্ধান শেষে তাদের লাশ হস্তান্তর করা হবে। ’
ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আহতদের ব্যাপারেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। পুরো বিষয়টি তদন্তের মধ্যে আছে। আমরা হামলাকারীদের সনাক্ত করার ব্যাপারে আশাবাদী। ’
- 1
- 2
- 3
- 4
- 5
- 6
- 7
- 8
- 9
- 10
- 11
- 12
- 13
- 14
- 15
- 16
- 17
- 18
- 19
- 20
- 21
- 22
- 23
- 24
- 25
- 26
- 27
- 28
- 29
- 30
- 31
- 32
- 33
- 34
- 35
- 36
- 37
- 38
- 39
- 40
- 41
- 42
- 43
- 44
- 45
- 46
- 47
- 48
- 49
- 50
- 51
- 52
- 53
- 54
- 55
- 56
- 57
- 58
- 59
- 60
- 61
- 62
- 63
- 64
- 65
- 66
- 67
- 68
- 69
- 70
- 71
- 72
- 73
- 74
- 75
- 76
- 77
- 78
- 79
- 80
- 81
- 82
- 83
- 84
- 85
- 86
- 87
- 88
- 89
- 90
- 91
- 92
- 93
- 94
- 95
- 96
- 97
- 98
- 99
- 100
- 101
- 102
- 103
- 104
- 105
- 106
- 107
- 108
- 109
- 110