আশুলিয়ায় মেডিকেল শিক্ষার্থী-পুলিশ সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ১
নটরডেমসহ তিন কলেজে পরীক্ষার মাধ্যমেই ভর্তি
রাজধানীর নটরডেম, হলিক্রস ও সেন্ট জোসেফ কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে ‘পরীক্ষা নেয়া হবে’ মর্মে হাই কোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
হাই কোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে সরকারের করা আপিল রোববার (১২ জুন) খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
সর্বোচ্চ আদালতের এ আদেশের ফলে ওই তিন কলেজের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্রভাবে ভর্তি প্রক্রিয়ায় আর কোনো বাধা রইলো না।
এর আগে গত ১২ মে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নীতিমালা জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নীতিমালা অনুযায়ী অনলাইনের মাধ্যমে ২৬ মে থেকে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়। আগামী ১৬ জুন ভর্তির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। আর ১৮ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত চলবে ভর্তি।
ওই নীতিমালার ৩.১ ধারা অনুযায়ী একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে কোনো পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে না। মাধ্যমিকে ফলের ওপর ভিত্তি করে ভর্তি করা হবে। ৩.২ ধারা অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অধস্তন দপ্তর সমুহ ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ২ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করতে হবে।
এছাড়া ৪.১ ধারায় বলা হয়েছে- অনলাইনে বা টেলিটক এসএমএসের মাধ্যমে ভর্তির আবেদন করা যাবে। ৪.২ ধারায় বলা হয়েছে, অনলাইন আবেদনের ক্ষেত্রে ১৫০ টাকা জমাদান সাপেক্ষে ১০টি কলেজকে পছন্দের তালিকায় দেয়া যাবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা এই নীতিমালা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে পৃথক তিনটি রিট আবেদন করেন এ তিন কলেজের অধ্যক্ষ। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২২ মে ফলের ভিত্তিতে ভর্তির নীতিমালা সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা এ সার্কুলার তিন কলেজের ক্ষেত্রে স্থগিত করে দেন।
সেই অনুযায়ী কলেজ তিনটি প্রতিষ্ঠানই নিজেদের নিয়ম অনুযায়ী গত শুক্রবার (১০ জুন) ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। আজ আপিল বিভাগের রায়ে তাদের সেই ভর্তি প্রক্রিয়া যথাযথ বলেই গণ্য হল।
আইসিটি বিষয় খুলতে অনুমতি লাগবে না
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয় খোলার জন্য অনুমতির প্রয়োজন হবে না বলে জানিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক এটিএম মইনুল হোসেন স্বাক্ষরিত আদেশে বৃহস্পতিবার (৯ জুন) এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন এবং ডিজিটাল বালাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে সাধারণ শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষাসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয় আবশ্যিক বিষয় হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত বিষয় খোলার জন্য বোর্ডের অনুমতির প্রয়োজন নেই।’
তবে আইসিটি শিক্ষকদের বেতন-ভাতার শর্ত দিয়ে শিক্ষা বোর্ড বলছে, আইসিটি বিষয়ে নিয়োগ করা শিক্ষকদের বেতন-ভাতাদি পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানকে বহন করতে হবে।
গত ২৮ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক পরিপত্রে জানায়, বিশ্বমানের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অপেক্ষাকৃত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়কে আবশ্যিক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত আইসিটি বিষয়ে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের বেতন-ভাতাদি নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বহন করারও শর্তে বোর্ডগুলোর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে বিষয় খোলার নির্দেশ দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, আইসিটিতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয় আবশ্যিক করা হয়েছে। ইচএসসিতে দ্বিতীয়বার এ বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও আগামী বছর এসএসসিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপর পরীক্ষা হবে।
কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ের শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত নন। অর্থাৎ তারা বেতন-ভাতার সরকারি অংশ পান না। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করে আসা শিক্ষকদের ক্ষোভ রয়েছে।
গভর্নিং বডির সভাপতি থাকতে পারবেন না সাংসদরা, আপিলেও বহাল
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব পালন এবং গভর্নিং বডির বিশেষ কমিটির বিধান অবৈধ বলে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ।
রোববার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দিয়েছে।
এতে রাশেদ খান মেননের বিশেষ কমিটিও বাতিল করা হয়েছে।
গত ১ জুন বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা ২০০৯ এর ৫ (২) এবং ৫০ ধারাকে বাতিল করে রায় দেয় বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
রিট আবেদনকারী আইনজীবী ড. ইউনুচ আলী আকন্দ বলেন, এ আদেশের ফলে বিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা স্কুল-কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হতে পারবেন না।
তবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ইসরাত জাহান বলেন, আদালত ম্যানেজিং কমিটিতে ইচ্ছা পোষণ করে সংসদ সদস্যদের সভাপতি হওয়ার বিধান এবং বিশেষ কমিটির বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করেছে। এর ফলে এখন সংসদ সদস্যরা ইচ্ছে করলেই কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পারবেন না। সভাপতি হতে হলে তাদের নির্বাচনের মাধ্যমে আসতে হবে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশেষ কমিটি করা যাবে না।
পরে ৮ জুন হাইকোর্টের ওই রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। ওইদিন স্থগিতাদেশ না দিয়ে আবেদনটি ১২ জুন শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন চেম্বার বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
গত ১৩ এপ্রিল ওই রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব পালন এবং নির্বাচন ছাড়া কমিটি গঠন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না-তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট।
রিট আবেদনকারী আইনজীবী ইউনুচ আলী বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রবিধানমালা ২০০৯-এর ৫ ও ৫০ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৫ ধারা হচ্ছে এমপিদের সভাপতি পদ ও ৫০ ধারা হচ্ছে বিশেষ কমিটি গঠন নিয়ে। আদালত দু’টি ধারাই বাতিল ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করেছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধ্যাদেশের (১৯৬১) আওতায় ‘মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা-২০০৯ এর ৫ ধারা (গভর্নিংবডির সভাপতি মনোনয়ন) এর (১) উপ-বিধিতে বলা হয়েছে, ‘কোনো স্থানীয় নির্বাচিত সংসদ সদস্য তার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এমন সংখ্যক উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতির দ্বায়িত্ব গ্রহণ করতে পারবেন’।
‘(২) উপ-বিধান ১ এর অধীন সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের জন্য স্থানীয় নির্বাচিত সংসদ সদস্য, তার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত যেসব উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব গ্রহণ করতে ইচ্ছুক তার উল্লেখসহ লিখিতভাবে এ প্রবিধানমালার অধীন বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে তার অভিপ্রায় ব্যক্ত করবেন এবং এ অভিপ্রায়পত্র সংশ্লিষ্ট বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানগুলোর সভাপতি হিসেবে তার মনোনয়ন হিসেবে গণ্য হবে’।
৫০ ধারায় বলা হয়েছে, ‘বিশেষ ধরনের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটি- বিশেষ পরিস্থিতিতে বোর্ড এবং সরকারের পূর্বানুমোদক্রমে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের কোনো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ ধরনের গভর্নিং বডি বা ক্ষেত্রমতে ম্যানেজিং কমিটি করা যাবে’।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বিচারের দাবিতে রাবিতে বিক্ষোভ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর নেতাকর্মীদের মারধরের ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট।
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছন থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে লাইব্রেরির সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। সমাবেশ শেষে নেতারা বিভিন্ন দাবি নিয়ে প্রক্টরের সঙ্গে দেখা করেন।
সমাবেশে বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী রাবি শাখার সভাপতি প্রদীপ মার্ডি বলেন, ‘হলে সিট দখলকে কেন্দ্র করে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের কর্মীর ওপর সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বিচারের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ফেডারেশনের রাবি শাখার সভাপতি কিংশুক কিঞ্জল, ছাত্র ইউনিয়নের রাবি সংসদের সভাপতি মিনহাজুল আবেদিন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সদস্য লিটন দাশ প্রমুখ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলে কক্ষ পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার রাত ১০ দিকে বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর এক নেতা ও দুই কর্মীকে মারধর করে ছাত্রলীগকর্মীরা। অভিযোগ উঠেছে, ওই হলের ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে মঞ্জিলের নেতৃত্বে ফুয়াস, সুলাইমান, সিদ্দিক, আশরাফুলসহ বেশ কয়েকজন কর্মী মারধরে অংশ নেয়।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকার বাজেট
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের ব্যয় নির্বাহের জন্য মোট ৩ হাজার ৩শ' ৯০ কোটি ৬৯ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন করেছে।
বৃহস্পতিবার কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে ১৪৪তম সভায় এই বাজেট অনুমোদিত হয়। ইউজিসি সচিব ড. মোঃ খালেদ সভাটি পরিচালনা করেন।
সভায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের জন্য ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের জন্য ২ হাজার ৮২৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকার সংশোধিত বাজেট অনুমোদন করা হয়। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের ব্যয় নির্বাহের জন্য মূল বাজেটে ৩৫ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেটে ৩২ কোটি ২৫ লাখ টাকা বাজেট অনুমোদন করা হয়।
সভায় পরিকল্পনা কমিশন (আর্থ সামাজিক অবকাঠামো), সদস্য আবদুল মান্নান, ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউসুফ আলী মোল্লা, প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম, প্রফেসর ড. মোঃ আখতার হোসেন, প্রফেসর ড. এম. শাহ্ নওয়াজ আলি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ আলী আকবরসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সব শূন্যপদে প্যানেল শিক্ষকদের নিয়োগের জন্য নতুন নির্দেশনা
রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য প্যানেলভুক্ত প্রার্থীদের সবাই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন। সদ্য জাতীয়করণ করা রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন সৃষ্ট পদসহ (পঞ্চম পদ) সব শূন্যপদে প্যানেল শিক্ষকদের নিয়োগের জন্য নতুন নির্দেশনা জারিকে স্বাগত জানিয়েছে রিটকারী আইনজীবী সিদ্দিক উল্ল্যাহ মিয়া।
বৃহস্পতিবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে নতুন নির্দেশনা দিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের এই আইনজীবী সব প্যানেল শিক্ষকের পক্ষে উচ্চ আদালতে রিট করে রায় পান। আদালতের রায়েরও কিছুদিন পর এদেরকে নিয়োগদানের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির আগে দ্রুত নিয়োগ দিতে সরকারকে একটি আইনী নোটিশ দেন সিদ্দিক উল্ল্যাহ মিয়া। আইনী নোটিশ দেয়ার পরের দিন সরকার নিয়োগদানের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপন জারির একটি কপি এই আইনজীবীকে প্রদান করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে তিনি স্বাগত জানান।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফপ্তর পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মো. আনোয়ারুল হক স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৩ সালের আদেশ অনুযায়ী জাতীয়করণ করা ২২ হাজার ৯২৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে একটি করে প্রধান শিক্ষক ও চাজন সহকারী শিক্ষকের পদ রাজস্ব খাতে সৃজন করা হয়েছে। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগের সম্মতি রয়েছে। সৃজিত পদে প্যানেলভুক্ত শিক্ষকদের নিয়োগ দেয়া যাবে।
আগে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে গত ৬ জুন জাতীয়করণ করা বিদ্যালয়ের শূন্য পদে প্যানেলভুক্ত প্রার্থীদের মেধাক্রম অনুযায়ী সাতদিনের মধ্যে নিয়োগ দিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে ওই চিঠিতে নতুন সৃষ্টি হওয়া শূন্য পদের বিষয়ে কিছু বলা না থাকায়, মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা অফিস এ পদে প্যানেলভুক্তদের নিয়োগ বন্ধ ছিল।
আগে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছিল, উপজেলা বা থানায় জাতীয়করণ করা বিদ্যালয়ের শূন্য পদে প্যানেলভুক্ত প্রার্থীদের মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া হবে। মেধার ভিত্তিতে শূন্যপদে নিয়োগ হলেও প্যানেলভুক্ত সবাই নিয়োগ পাবেন না। ২০১৩ সালের আগের হিসাব অনুযায়ী প্যানেলভুক্ত প্রার্থীর সংখ্যা সাড়ে ২৮ হাজারের মতো।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান সম্প্রতি জানিয়েছেন, যারা মামলা করেছে তাদের প্রত্যেককে নিয়োগ দিতে বলেছেন আদালত। ৭০০ রিটে ১০ হাজার জন জিতেছে। এর আগে রিট করেছিলেন ১০ জন। এই নিয়ে মোট ১০ হাজার ১০ জন হলো। আমরা সবাইকে নিয়োগ দেব।
পড়াশোনার চাপে দিশেহারা শিশুরা
ফাহিম রহমান (ছদ্মনাম), রাজধানীর একটি নামকরা স্কুলের শিক্ষার্থী। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া ফাহিম রোজ সকাল সাড়ে ছয়টায় ঘুম থেকে ওঠে। তাকে খাবার খেয়ে তৈরি হয়ে সকাল আটটার মধ্যে স্কুলে পৌঁছাতে হয়। বেলা দুইটায় ক্লাস শেষ। তারপর আধা ঘণ্টার বিরতি। স্কুলেই কোচিং করে সে; বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। বাসায় ফিরতে ফিরতে সাড়ে পাঁচটা।
আধা ঘণ্টা সময় মেলে হাতমুখ ধুয়ে খাবার খাওয়ার জন্য। সন্ধ্যা ছয়টায় গৃহশিক্ষক আসেন আরবি পড়াতে। তিনি যেতে না-যেতেই আরেকজন গৃহশিক্ষক হাজির। তাঁর কাছে পড়তে হয় রাত নয়টা পর্যন্ত। তারপর সারা দিনে আসে ফাহিমের কাঙ্ক্ষিত সেই এক ঘণ্টা, যে সময়টায় তাকে পড়তে হয় না। খেয়ে আর কম্পিউটারে গেমস খেলেই এ সময়টা কাটে। রাত ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত মায়ের কাছে পড়ে ঘুমাতে যায় ফাহিম।
১২ বছর বয়সী ফাহিমের এভাবেই প্রতিদিন কাটে। শুক্রবার ছাড়া এই রুটিনের কোনো হেরফের হয় না। ফাহিমের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, সে টেলিভিশন দেখে না। সিনেমা দেখে না। শুধু পত্রিকাই নয়, পাঠ্যবইয়ের বাইরে কোনো বই পড়ার সময়ও তার নেই। খেলাধুলা করে না। তবে শুক্রবার মাঝেমধ্যে বাইরে খেতে যায়।
তবু ফাহিমকে নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই মা-বাবার। প্রায়ই স্কুল থেকে ওর নামে অভিযোগ আসে। হোমওয়ার্ক ঠিকমতো না করা বা ক্লাসে মনোযোগী নয়—অভিযোগগুলো এমনই। গৃহশিক্ষকেরাও একই অভিযোগ করছেন। পড়াশোনায় মনোযোগী করার চেষ্টা করেও কোনো ফল হচ্ছে না। বরং ফাহিম এখন কথায় কথায় রেগে যায়, চিত্কার-চেঁচামেচি করে। আবার অনেক সময় জিনিসপত্রও ভাঙচুর করে।
এ অবস্থায় এক স্বজনের পরামর্শে মনোরোগবিদের শরণাপন্ন হন ফাহিমের মা-বাবা। এখনো ফাহিম তাঁর কাছে চিকিৎসাধীন। ফাহিমের চিকিৎসক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সালাহ্উদ্দীন কাউসার জানান, পড়াশোনার অতিরিক্ত চাপের কারণে ওর মনোজগতে একধরনের চাপ তৈরি হয়েছে, যা ওর বয়সের তুলনায় বেশি। তা ছাড়া সারা দিনে ওর বিনোদনের কোনো সুযোগ নেই, যা ওর মধ্যে কিছু মানসিক সমস্যা তৈরি করেছে। এ রকম চলতে থাকলে একসময় ফাহিম মানসিক রোগী হয়ে যাবে বলে মা-বাবাকে সতর্ক করেছেন এই চিকিৎসক। সালাহ্উদ্দীন বলেন, বর্তমানে এ ধরনের সমস্যা নিয়ে আসা শিশুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ফাহিমের দৈনন্দিন তালিকার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এ বিষয়ে ওর মায়ের কথা, পিএসসিতে ফাহিম জিপিএ-৫ পায়নি। মানসিক রোগ হোক আর যা-ই হোক, পরীক্ষায় ওকে ভালো করতেই হবে।
সন্তানের সুস্থ ভবিষ্যতের থেকে ভালো ফল কি বেশি প্রত্যাশিত? প্রশ্নটি করি মাকে। তিনি বলেন, ভালো ফল না হলে ওর ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ডুবে যাবে। কেবল তা-ই নয়, ওর মায়ের মধ্যে সন্তানকে নিয়ে একধরনের প্রতিযোগিতাও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘ওর সব কাজিন জিপিএ-৫ পেয়েছে। ওকেও পেতে হবে।’
শুধু ফাহিম নয়, দেশের অনেক শিশুই পড়াশোনার চাপে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। শিশু মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ-২০০৯ অনুযায়ী, দেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ শিশু মানসিক রোগে আক্রান্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট জরিপটি চালায়। যেখানে মেয়েশিশুর (১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ) তুলনায় ছেলেশিশুদের মধ্যে (১৯ দশমিক ২১ শতাংশ) মানসিক রোগের হার বেশি। গবেষকেরা শিশুদের মধ্যে ২১ ধরনের মানসিক রোগের সন্ধান পেয়েছেন। বিষণ্নতা, অতিচঞ্চলতা, অবাধ্যতা, উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা, ভয় পাওয়া ইত্যাদি।
আট বছর বয়সী রিমা আলম তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলে প্রতিদিনই তাকে কোনো না কোনো বিষয়ের ওপর পরীক্ষা দিতে হয়। এ ছাড়া হোমওয়ার্ক, ক্লাসওয়ার্ক, অ্যাসাইনমেন্ট তো রয়েছেই। কিন্তু পরীক্ষা দিতে মোটেও ভালো লাগে না ওর। ফলে নিয়মিতই মা-বাবার বকাঝকা খেতে হয়। তবু পড়তে চায় না রিমা। তেমন কথাও বলে না। কেমন চুপ করে বসে থাকে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক আহমেদ হেলাল এ বিষয়ে বলেন, স্কুলে পড়ার চাপ বৃদ্ধি ও সন্তানদের নিয়ে মা-বাবার মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের কারণে শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ হচ্ছে না। দিন দিন অসহায় হয়ে যাচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। বেশির ভাগ শিশু এই পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। ফলে তাদের মধ্যে একধরনের হতাশা তৈরি হয়। সামাজিক সম্পর্ক গড়তে ব্যর্থ হয়। মানবিক গুণাবলি হারিয়ে ফেলে। আবেগের অস্বাভাবিক বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এমনকি অনেক সময় মাদকাসক্তও হয়ে পড়ে। এ ধরনের সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে বলে জানান তিনি। আর এতে নানা মানসিক সমস্যায় ভোগার পাশাপাশি শিশুর মানসিক রোগের ঝুঁকি অনেকাংশেই বেড়ে যাচ্ছে।
তাই অভিভাবককে এখনই সচেতন হতে হবে। নিজের সন্তানের সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যতের কথা ভেবে পড়াশোনার চাপ কমাতে হবে। আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে শিশুর মানবিক গুণাবলি বিকাশে।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর মারধরে গুরুতর জখম সাংবাদিক
অপহৃত তরুণীকে রক্ষা করতে গিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর মারধরে গুরুতর জখম হয়েছেন এক সাংবাদিক।
ওই সাংবাদিককে পিটিয়ে জখম করেন শাখা ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মহিতোষ রায় টিটু ও তার অনুসারীরা।
বুধবার (৮ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি গেটে এক তরুণীকে অপহরণকারীর কাছ থেকে রক্ষা করতে গিয়ে এ মারধরের শিকার হন বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকমের জাবি প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম।
নিরাপত্তা কর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গোলাম সরোয়ার নামের এক যুবক এক তরুণীকে অপহরণ করে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসে। এ সময় বিডিনিউজের সাংবাদিক সেখানে উপস্থিত হয়ে নিরাপত্তাকর্মীকে ফোন দিয়ে তাদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটক ডেইরি গেটে অপেক্ষা করতে থাকেন। এ সময় জাবি ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মহিতোষ রায় টিটু সেখানে এসে অপহরণকারীকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে।
এতে বাধা দিলে সে শফিকের ওপর চড়াও হয়ে তার অনুসারীদের ফোন দিয়ে ডেকে এনে তাকে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে মারধর করেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হন।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা তাকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। অবস্থার অবনতি দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে।
তবে হামলার বিষয়ে মুঠোফোনে অভিযুক্ত মহিতোষ রায় টিটুর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান জনি ও রাজিব আহমেদ রাসেল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ ছাত্রলীগ নেতাকে সাংগঠনিকভাবে সাময়িক বহিষ্কার করার কথা জানানো হয়েছে।
আহত শফিককে দেখতে এসে তারা বলেন, ‘এ হামলা দুঃখজনক। আমরা আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষী প্রমানিণিত হলে তাকে ছাত্রলীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বলেন, ‘আমি বিষয়টি জেনেছি। তোমরা লিখিত অভিযোগ দাও। অভিযোগ পেলেই দ্রুত তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেব।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা এ হামলার নিন্দা জানিয়ে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার ও দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। বুধবার রাতে সংগঠনের সভাপতি লাকী আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক এ জি এম জিলানী এক যৌথ বিবৃতিতে হামলায় জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান।