ধারাবাহিকভাবে কমে যাচ্ছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। হুন্ডি তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ পরিস্থিতিতে অবৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ ঠেকাতে করণীয় বিষয় নিয়ে ৩১ ব্যাংকের এমডিদের সাথে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈঠকে প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর উদ্বুদ্ধ করতে ব্যাংকারদের পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস. কে, সুর চৌধুরী বলেন, চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমায় প্রধানমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এবিষয়ে করণীয় নির্ধারণে ব্যাংকগুলোর এমডিদের সাথে বৈঠক করা হয়েছে। এতে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমার পিছনে বেশকিছু কারণ উদ্ঘাটিত হয়েছে। এমডিদের কতগুলো প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশ্লেষণ করছে বলে তিনি জানান।
জানা গেছে, মোবাইল ব্যাংকিং চালু হওয়ার পর প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে পরিবর্তে সাব এজেন্টদের মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠাচ্ছে। প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত হওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা অর্থ পাঠাতে এ পন্থা অবলম্বন করছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে রেমিট্যান্স প্রবাহে।
এ বিষয়ে ডেপুটি গভর্নর সুর চৌধুরী বলেন, একশ্রেণির অসাধু বিকাশ তথা মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে এদেশের সাব-এজেন্ট দিয়ে গ্রাহকের টাকা দ্রুত পৌঁছে দিচ্ছে। এ অর্থ ব্যাংকিংয়ের চ্যানেলে আসছে না। তাই দ্রুত সেবা নিশ্চিত করার জন্য ওভারসিজ এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে রেমিট্যান্সের অর্থ পৌঁছে দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। এছাড়া বিদেশী ব্যাংকগুলোর এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর সংরক্ষিত অর্থও কমিয়ে আনা হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে আরো দেখা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের সাতটি দেশ থেকে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে তা সামগ্রিক হারে প্রায় ৬৮ শতাংশ। অর্থাৎ তিন ভাগের দুইভাগই আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। আর মধ্যেপ্রাচ্যের সাত দেশের মধ্যে ৩৭ শতাংশ আসে সৌদি আরব থেকে। এই দেশ থেকেই সবচেয়ে বেশি কমেছে রেমিট্যান্স। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সৌদি আরব থেকে গত তিন মাস যাবত ধারাবাহিকভাবে কমে যাচ্ছে রেমিট্যান্স।
রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় ব্যাংকে নগদ ডলারের সঙ্কট রয়েছে। সে জন্য ব্যাংকের মূল্যের চেয়ে খোলা বাজারে ডলার প্রতি তিন টাকা বেশি রয়েছে। অনেকে ডলার হাতে হাতে নিয়ে এসে বেশি মূল্যে খোলা বাজারে বিক্রি করছে। এ পরিস্থিতি উত্তোরণে গতবছরে সাড়ে তিন মিলিয়ন ডলার আমদানি করা হয়েছিল। কিন্তু আমদানির ওপরে ২০ শতাংশ ট্যাক্স থাকায় এতে খুব বেশি লাভবান হওয়া যায়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এনবিআরের কাছে ১০ মিলিয়ন ডলার আমদানিতে ট্যাক্স প্রত্যাহার চেয়েছিল কিন্তু এনবিআর কোনো সাড়া দেয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে জানা যায়, ব্যাংকগুলোর কাছে নগদ ডলারের নোটের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক কোটি চার লাখ ৯০ হাজার ডলার। যা প্রয়োজনের তুলনায় কম।
সুর চৌধুরী বলেন, ডলারের বিপরীতে পাউন্ড স্ট্যারলিং ও ইউরোর মূল্য হ্রাস হয়েছে। যা রেমিট্যান্স আহরণে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরো বলেন, তেলের দর কমে যাওয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের যুদ্ধাবস্থা চলায় শ্রমিকদের বেতন কমে গেছে। এতে শ্রমিকরা আগের মতো রেমিট্যান্স পাঠাতে পারছেন না।
বৈঠকে ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমার পেছনে অনেক কিছু কারণ রয়েছে। পাউন্ড, ইউরো, রিংগিট, সিঙ্গাপুর ডলারসহ প্রভৃতি মুদ্রার মূল্যমান কমে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দর কমে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে।